রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

টানা বৃষ্টিতে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সতর্ক প্রশাসন

September 16, 2024 | 2 min read

লাগাতার বৃষ্টিতে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি, ছবি সৌজন্যে: etvbharat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রাজ্যে নিম্নচাপের জেরে অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে৷ যার জেরে রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শুরু হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি৷ তিনদিনের টানা বৃষ্টির ফলে বেড়েছে নদীর জল। জল ঢুকে প্লাবিত একাধিক এলাকা৷ ফলে পুজোর মুখে আবারও বন্যার ভ্রুকুটি রাজ্যে। অনেকেরই আশঙ্কা, এবারের পুজোয় হয়তো নৌকা ডিঙ্গি নিয়েই কাটাতে হবে তাঁদের। তবে প্লাবিত এলাকাগুলিতে নজর রাখছে প্রশাসন।

চন্দ্রকোনার পিংলা গ্রামে টানা বর্ষণে জলবন্দি একাধিক পরিবার। ঘোষকিরা, চৈতন্যপুর এলাকায় শিলাবতী নদীর জল বৃদ্ধিতে ডুবেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতু৷ নৌকা নামিয়ে চলছে নদী পারাপার। টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে জেরবার দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলও। অতিবৃষ্টির কারণে দামোদরের দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বেড়ে এখন ৪৮.৫৫০ কিউসেক। পুজোর মুখে কি তাহলে বন্যার আশঙ্কা দামোদরের নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত তিন জেলায়? সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে মানুষের মনে৷ তবে এই জল ছাড়ার পরিমাণ পাঞ্চেত বা মাইথনের জল ছাড়ার কারণে নয় বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর। গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্গাপুরে বৃষ্টির পরিমাণ ৭০ মিলিমিটার। আসানসোলে বৃষ্টির পরিমাণ ১৫১. ৪০ মিলিমিটার।

বৃষ্টির জেরে বেড়েছে টুমনি নদীর জলস্তর। সেই জলে প্লাবিত হয়েছে কাঁকসার বিদবিহারের শিবপুর, কৃষ্ণপুর, নবগ্রাম-সহ একাধিক গ্রামের চাষের জমি। কয়েক হাজার বিঘা চাষের জমি এখন জলের তলায়। টুমনি নদীর জলে শিবপুরের ভাসাপুল জলমগ্ন হওয়ায় বিচ্ছিন্ন পশ্চিম বর্ধমানের সঙ্গে বীরভূমের যোগাযোগ। চরম দুর্ভোগের মুখে দুই জেলার মানুষ। চরম ক্ষতির মুখে কৃষকরা। সোনামুখীর দামোদর নদীর জল বেড়ে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি৷ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বাঁধ ৷ আতঙ্কিত দামোদর তীরবর্তী বিস্তৃত এলাকার সাধারণ মানুষ৷

তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারণে এবার জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল বাঁকুড়ার কংসাবতীর মুকুটমণিপুর জলাধার কর্তৃপক্ষ৷ সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ কংসাবতী জলাধার থেকে নদী বক্ষে ১০০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়। এর জেরে নিম্ন অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ অন্যদিকে এক রাতের ঝড়েই লণ্ডভণ্ড মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি ব্লকের বিঘের পর বিঘে কলাবাগান। মাথায় হাত কলা চাষিদের । শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলাই ছিল। দুপুরবেলায় হঠাৎ ঘন কালো মেঘ নিয়ে আকাশ ঘনিয়ে আসে। তারপরেই শুরু হয় জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টি। সে বৃষ্টি গত শুক্রবার থেকে এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

বৃষ্টির দুর্যোগের কারণে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির অন্তর্গত ভোলাখালিতে ডাসা নদীর ধারে বাঁধের অবস্থা দুর্বল হয়েছে। যে কোনও সময়ে নদীবাঁধ ভেঙে গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা। হাসনাবাদের বরুণহাট এলাকাতেও ইছামতী নদীর বাঁধ দুর্বল হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এ রকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চলতে থাকলে নদীবাঁধ যে কোনও মুহূর্তে ভাঙতে পারে। অতীতেও বসিরহাটের বিভিন্ন নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে দুর্যোগের সময়ে বা কটালের সময়ে আতঙ্কে প্রহর কাটে এলাকাবাসীদের। এ বারও সেই একই ছবি বসিরহাট মহকুমার একাধিক অঞ্চলে। স্বরূপনগরেও ইছামতীর জল প্রবেশ করেছে দুর্গাপুর ও তারণীপুর গ্রামে। দু’টি এলাকায় বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জলের তলায়।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদিয়া জেলাতেও বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে। জল প্রবেশ করেছে ফুল চাষের জমিতে। শান্তিপুর, রানাঘাটের একাধিক জায়গায় ফুল চাষের জমিতে জলের তলায়। ক্ষয়ক্ষতির অঙ্ক হিসেব কষতে বসেছেন ফুল চাষিরা। দমকা হাওয়ার কারণে ভাগীরথী ও অন্য নদীগুলিতে ফেরি পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে। যাত্রী সুরক্ষার কারণে খেয়া পারাপার সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। একই সঙ্গে ভাগীরথীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে দানা বেঁধেছে ভাঙন আতঙ্ক। শান্তিপুরের গবারচর এলাকায় ভাগীরথীর ধারে নদীবাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। যে সব এলাকায় বাড়ি ভেঙে পড়েছে সেখানে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। যে সব এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে তা দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #rains, #Flood Situation

আরো দেখুন