দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বৃহস্পতিবার। বিশেষ করে হুগলি ও হাওড়া জেলার নিম্ন দামোদর অববাহিকা (হুগলির আরামবাগ মহকুমা, হাওড়ার আমতা-উদয়নারায়ণপুর) ও দুই মেদিনীপুরে ঘাটাল, পাঁশকুড়া সহ বিভিন্ন এলাকার হাল এখনও বেশ উদ্বেগজনক। হু হু করে বন্যার জল ঢুকছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুরে ডুবে গিয়েছে কলকাতা-মুম্বই ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। জলমগ্ন রাস্তায় ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। পাঁশকুড়া শহরে রেল স্টেশনের সামনে জল জমেছে। সরকারি সূত্রে খবর, বন্যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। মঙ্গল ও বুধবার পাঁচজন জলে ডুবে মারা গিয়েছেন। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরেও জলে ডুবে একজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। বন্যাদুর্গত ১২টি জেলায় ৫৬৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ঘরছাড়া হয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৭১ হাজার মানুষ। উদ্ধারকাজে নেমেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৪টি টিম।
এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ও হাওড়ার আমতা-উদয়নারায়ণপুরের বন্যা কবলিত জায়গাগুলি পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনবসতি এলাকায় কীভাবে জল ঢুকছে, তা প্রত্যক্ষ করেন। ‘ম্যান মেড’ এই বন্যার জন্য এদিনও তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন ডিভিসি-র। দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছি। ডিভিসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথা শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। মমতা আবারও জানিয়েছেন, এটা ম্যান মেড বন্যা। বৃষ্টির জলে এই বন্যা হয়নি। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সেখানকার জল বাংলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। জল ছাড়া জনিত পরিস্থিতির জন্য ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত তিনদিন বন্ধ করার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, পাঁচ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়া হয়েছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি।
গোটা পরিস্থিতির জন্য মোদী সরকারের দিকেও আঙুল তুলেছেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ডিভিসি-র বাঁধগুলিতে জলাধারের ধারণ ক্ষমতা ড্রেজিং করে বাড়ানোর উদ্যোগ কেন নেয়নি কেন্দ্র? তাই ডিভিসি এখন মাত্র ৩৬ শতাংশ জল ধরে রাখতে পারছে। সেই কারণে প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। মুখ্যমন্ত্রীর আরও নির্দেশ, বন্যা দুর্গতদের সবাই যাতে ত্রাণ সামগ্রী পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রাজ্য সরকারের শস্য বিমা প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ পাবেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। আর যেহেতু জল এখনও বাড়ছে, তাই বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষকে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এদিন নবান্নে ফিরে এসে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী।