আউশগ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো আড়াইশো বছরের পুরনো, বংশ পরম্পরায় তৈরি পুঁথি দিয়েই হয় দেবী আরাধনা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো আড়াইশো বছরের পুরনো। কথিত আছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষ কালাচাঁদ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ভাই কিরণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একসময় কাঁসা-পিতলের ব্যবসা করতেন। তাঁদের আদি নিবাস ছিল বীরভূমের আদিত্যপুর। পরে এই এলাকায় ও খোর্দ্দদেরিয়াপুরে মাহাল অর্থাৎ ৫০০বিঘা জমি কিনেছিলেন। পরবর্তীকালে হাওড়ার সালকিয়ায় জমিজমা কেনেন। তবে উত্তর রামনগরেই তাঁরা স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। আরাধ্য দেবতা শ্রীধরনারায়ণ ও দেবী দুর্গার জন্য মন্দির নির্মাণ করেন।
সপ্তমীর দিন সকালে বাঁধ পুস্করিণীতে গ্রামের সমস্ত দুর্গাপুজোর দল বেঁধে কলাবউ আনতে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। যা বংশের অতীতের জমিদারির একটি অংশ। এই দিন দোলা আনার পর কলাবউকে সিঁদুর পরিয়ে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির মেয়েরা দারাসিঁদুর খেলেন। পরিবারের বিশেষ ঐতিহ্য হিসেবে ধরা হয় এই পর্বটি। দশমীর সকালে কলাবউ ও দেবীর ঘট নিয়ে গিয়ে বিসর্জন করা হয় বাঁধের জলেই। তবে তার আগে পালন করতে হয় বিশেষ রীতি। কলাবউ নিরঞ্জনের আগে দেবতা শ্রীধরনারায়ণ ও লক্ষ্মীকে প্রতিষ্ঠা করা হয় নির্দিষ্ট স্থানে।
পরিবারের সদস্য শ্রীধর চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রথা অনুযায়ী বাড়ির একজন করে সদস্য মায়ের পুজো করেন। আজও সেই প্রথা বিদ্যমান। বর্তমানে পরিবারের সদস্য উৎসব চট্টোপাধ্যায় দেবীর পুজো করেন। একইসঙ্গে দেবীর বলিদান প্রথাও সম্পূর্ণ করতে হয় পরিবারের সদস্যকেই। বলিদানের কাজ করেন পুলক চট্টোপাধ্যায়। তবে এখানে ছাগ বলি দেওয়া হয় না। পুজোর সময় প্রতিমার বাঁ দিকে নারায়ণ এবং ডানদিকে লক্ষ্মীকে রাখা হয়। নারায়ণ থাকায় ছাগের বদলে চালকুমড়ো বলি হয়। একসময় বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের তোপধ্বনি শুনে বলি প্রথা পালিত হতো। এখন বননবগ্রামের জর্জবাড়ির তোপধ্বনি শুনে রামনগর স্কুল সংলগ্ন এলাকায় তোপ দাগা হয়। সেই আওয়াজ শুনে চট্টোপাধ্যায় পরিবার সহ গ্রামের বিভিন্ন পুজোর বলিদান হয়।