আর জি করের ঘটনার বিচার চাওয়ার আড়ালে শহুরে নকশালরা দেশদ্রোহিতার ‘বীজ বপন’ করছে কি না, তদন্ত করছে এনআইএ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস খুন-ধর্ষণের ঘটনার বিচার চাওয়ার আড়ালে দেশদ্রোহিতার ‘বীজ বপন’ করা হচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা, হাওড়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ১২টি জায়গায় ‘শহুরে নকশাল’দের খোঁজে হানা দেয় জাতীয় এনআইএ।
এই অভিযান মূলত ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নকশাল তথা মাওবাদী সংগঠনের জন্য ‘তহবিল’ সংগ্রহকারী এবং ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতায়’ উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে। এই পর্বে এমন বেশ কয়েকজনের খোঁজ চালিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দেশের সংবিধান, সুপ্রিম কোর্ট ও সার্বভৌমত্বকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করছে। একইসঙ্গে এনআইএ খোঁজ শুরু করেছে, কে বা কারা ‘ছাত্র-ছাত্রীদের’ ব্যানারের আড়ালে যাদবপুরের রাজপথে মিছিল করে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্লোগান—‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’তে সুর মিলিয়েছেন। ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তনী সহ এরকম ১৬-১৭ জনকে চিহ্নিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পৌঁছেছে।
‘আজাদি’ স্লোগানের এই টিমে রয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। এদিন এনআইএর অভিযান হয়েছে কলকাতার নেতাজিনগর, সরশুনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা, উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি, হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের কেদার ভট্টাচার্য লেন, নদীয়ার মদনপুর ও পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে। অভিযানে বেশ কিছু নথিপত্র, হার্ডডিস্ক, কয়েকটি মোবাইল ফোন, প্রচারপত্র, মাওবাদীদের নিজেদের মধ্যে লেখা চিঠিপত্র উদ্ধার হয়েছে।
মাওবাদী সংস্রব থাকা যে ক’জনকে ‘চিহ্নিত’ করে এদিন সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টার খানা তল্লাশি চালিয়েছে এনআইএ, তাদের বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছে। আবার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাঁচির এনআইএ অফিসে হাজিরা দেওয়ার নোটিসও দিয়ে আসা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমের করিমগঞ্জের মাওবাদী নেতা সব্যসাচী ওরফে কিশোর দা’র ঘনিষ্ঠ অনুগামী এবং মদতদাতাদের খোঁজেই এদিনের মূল অভিযান। এহেন ‘ঘনিষ্ঠ’দের অনেককেই গত একমাসে শহর তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অভয়ার ঘটনায় জড়িতদের কড়া শাস্তির দাবিতে চলা সাধারণ মানুষের আন্দোলনের আড়ালে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সিপিআই (মাওবাদী) সম্প্রতি নর্দার্ন রিজিওনাল ব্যুরো (এনআরবি) তৈরি করে উত্তর ভারতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেছে। দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশে তারা গোপনে সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু করেছে। গত আগস্ট মাসে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ছ’জন মাওবাদীকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। তাদের কাছ থেকে যেসমস্ত ‘ডিজিটাল এভিডেন্স’ বাজেয়াপ্ত করা হয়, সেগুলি যাচাই করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা জানতে পেরেছে, এনআরবির যাবতীয় কাজকর্মের জন্য অর্থ সরবরাহ করছে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ‘এলিট’ শ্রেণির কয়েকজন এবং শহুরে নকশালদের একটা অংশ। এমনকী আর জি কর আন্দোলনকে সামনে রেখে ‘মাওবাদী সমর্থক’ বলে পরিচিত যে অংশ সম্প্রতি সক্রিয় হয়েছে, তাদের কাছেও পৌঁছেছে অর্থ।