অখণ্ড বাংলা ও শরৎচন্দ্র বসু
বছর দুয়েক আগেই নিখোঁজ হয়েছেন সুভাষচন্দ্র। শরৎচন্দ্র বসুর আবির্ভাব ঠিক সেই মুহূর্তেই।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দাঙ্গার ক্ষত কলকাতা বুকে তখনও দগদগে। ১৯৪৬ সালের রক্ত হিম করা দাঙ্গা। দীর্ঘদিন ধরে একই পরিবারের মতো বাংলার মাটিতে বাস করছিল যে দুটি সম্প্রদায়ের মানুষ তারাই তখন পরস্পরের ওপর আঘাত হানতে উদ্যত। দেশভাগ হচ্ছেই।
এপারে থাকবে কারা, কারাই বা ওপারে—এই ভাবনায় জট পাকাচ্ছে নিত্যনিয়মিত, ঠিক তখনই অখণ্ড বাংলার প্রস্তাব নিয়ে রাজনীতির জটিল রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব ঘটল শরৎচন্দ্র বসুর। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বড়দা। সেটা ১৯৪৭ সালের মে মাস। বছর দুয়েক আগেই নিখোঁজ হয়েছেন সুভাষচন্দ্র। শরৎচন্দ্র বসুর আবির্ভাব ঠিক সেই মুহূর্তেই।
শরৎচন্দ্র বসুর প্রস্তাব ছিল—বাংলা ভাগ হবে না। বাংলা থাকবে অখণ্ড এবং স্বাধীন। আপাতত বাংলা ভারতেও যাবে না। পাকিস্তানেও যাবে না। ভারত ভেঙে পাকিস্তান গঠনের পরবর্তী পর্যায়ে পরিস্থিতি বিচার করে স্বাধীন বাংলার প্রশাসকরা জনমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলা কোন দিকে যাবে।
প্রস্তাবে স্পষ্টতই বলা হয়েছিল : স্বাধীন বাংলায় থাকবে যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী এবং একটি জোট সরকার। সেই সরকারে সমান সংখ্যায় থাকবেন হিন্দু ও মুসলমান সদস্য। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী শরৎচন্দ্র বসুর লক্ষ্য ছিল— হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলা করুক সমাজতন্ত্র। আর বাংলা হয়ে উঠুক সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক দেশ।
এই সিদ্ধান্তে সায় ছিল তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সুরাবর্দি, মহম্মদ আলি, ফজলুর রহমান, প্রাদেশিক মুসলিম লিগের সম্পাদক আবুল হাশিম, আবদুল মালেক এবং অবিভক্ত বাংলার কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা কিরণশঙ্কর রায় ও সত্যরঞ্জন বক্সীর। সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতেই যেখানে প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সই করেছিলেন আবুল হাশিম ও শরৎচন্দ্র বসু।
শরৎবাবুর এমন বঙ্গপ্রীতিকে কংগ্রেস সায় দেননি। হিন্দু মহাসভার সর্বাধিনায়ক ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ প্রকাশ্যে শরৎচন্দ্র-সুরাবর্দির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
বাংলা ভাগ রোখা যায়নি। সুভাষ-অগ্রজের ভাবনা যদি সেই সময় চরিতার্থ হত, উপমহাদেশের ইতিহাস হয়তো বইত অন্য খাতে।