ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স রাখবেন কি করে?
নানা উপসর্গ। মাথা যন্ত্রনা, নৈরাশ্যবাদ। হতাশা। খিটখিটে আচরণ। অসুখের শিকড় অভিন্ন— অকুপেশনাল বার্ন-আউট। কর্মক্ষেত্রে মারাত্মক কাজের চাপ কাবু করে ফেলছে মানুষকে। এবং ওয়ার্ক স্ট্রেস সামলাতে না-পারার প্রভাব শুধু পেশাগত জীবনেই নয়, পড়ছে ব্যক্তিগত জীবনকেও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক-এক জনের ক্ষেত্রে প্রকট হয় এক-এক রকম উপসর্গ। যার গোড়ায় গলদটা থেকে যায় কর্মক্ষেত্রে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা চাপ, অফিস-বাড়ি ভারসাম্যের অভাব— এই সব কারণে আজকাল ঘোর সমস্যায় জর্জরিত জেন-ওয়াই বা মিলেনিয়াল প্রজন্ম।
চিকিৎসকদের আক্ষেপ, জীবনটা তছনছ না-হওয়া পর্যন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন না অধিকাংশই। ফলে, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ গোছের অপেক্ষায় আরও কাল হয়। সমস্যাটা ডালপালা মেলতে মেলতে গভীর মনোবিকারে পরিণত হতে সময় নেয় না। পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে যে, ২০১৯-এ বার্ন-আউটের সমস্যাকে সিন্ড্রোম (গুচ্ছ সমস্যার সহাবস্থান) আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে প্রকাশিত এক পরিসখ্যান বলছে, বিশ্ব জুড়ে বার্ন-আউটের জন্য বছরে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়। অথচ আক্ষেপ, নিয়োগকর্তা থেকে শুরু করে বস, এমনকী ভুক্তভোগীদের মধ্যেও এই ব্যাপারে এখনও তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা নয়, কাউন্সেলিংয়েই বার্ন-আউট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন ভুক্তভোগী। জীবনযাত্রার সামান্য বদল পরিস্থিতির আশাতীত উন্নতি ঘটাতে পারে। কর্মীকে বুঝতে হবে, পেশার বাইরে একটা বড় জীবন আছে, যেটা উপভোগ করা দরকার। বসকেও বুঝতে হবে যে, কাজের চাপ মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে কর্মদক্ষতা ও পারদর্শিতা ভীষণ মাত্রায় কমে যায়।
পেশার বাইরের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নিখাদ আড্ডা দিলে এবং সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে মাঝেমধ্যে একদিন ছুটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটালে বার্ন-আউটের সমস্যায় পড়তে হয় না। যোগব্যায়ামও লাভজনক। কিন্তু একবার বার্ন-আউটের শিকার হয়ে পড়লে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা মনোবিদের দ্বারস্থ হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
কাজের চাপ সঠিক ভাবে সামলাতে না-পারায় বছর দশেক চাকরি জীবনের পরেই অধিকাংশ মিলেনিয়াল বার্ন-আউটের সমস্যায় ভুগছেন। তবে এই সমস্যা লাঘব করার মূল দায়িত্ব কিন্তু চাকরিদাতারই। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়, যার জেরে কর্মীর অফিস ও বাড়ির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয়।