গ্যালপিংয়ে ভরসা করে লোকাল ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি রাজ্যে
গ্যালপিংয়ে ভরসা করে লোকাল ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি রাজ্যে। দিল্লির নির্দেশ এলেই চলতে পারে লোকাল ট্রেন। ঠিক হয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত হবে লোকাল ট্রেন চলাচলের দিনক্ষণ। রাজ্য সরকার মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চালানোর অনুরোধ করতেই বাংলায় শুরু হয়েছে তৎপরতা। শিয়ালদা ও হাওড়া ডিভিশনে স্টেশন চিহ্নিত করে পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব রেলওয়ে প্রাথমিকভাবে শতাধিক লোকাল ট্রেনের তালিকা তৈরি রেখেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আনলক–৪ গাইডলাইন মেনে রাজ্য সরকার চাইলে লোকাল ট্রেনে চালাতে তেমন কোনও বাধা নেই। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে সমস্যা ভিড় নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ করে অফিসটাইমে বনগাঁ বা কৃষ্ণনগরের ভিড় কীভাবে সামলানো যায় তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন রেলকর্তারা। শিয়ালদার ডিআরএম এস পি সিং সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, বিনা টিকিটে কাউকেই স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। হকারদের ওপরও থাকতে পারে রেলের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এতেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই রেলকর্তারা গ্যালপিং ট্রেনে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছেন। মোদ্দা কথা, সব ট্রেনকে সব স্টেশনে দাঁড় করানো যাবে না। আবার ছোট ছোট স্টেশন থেকেও লোকাল ট্রেন ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। থাকছে বিশেষ তালিকা ও সময়সূচি। স্টেশনে–স্টেশনে দূরত্ব–বিধি মানতে চলছে মার্কিংয়ের কাজ।
শিয়ালদা, হাওড়া–সহ কয়েকটি স্টেশনে বসানো হয়েছে অটোমেটিক থার্মাল স্ক্রিনিং মেশিন। যে সব স্টেশনে লোকাল ট্রেন থামতে পারে সেখানেও যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখা হতে পারে।
এখন থেকেই প্রতিদিন স্টেশন ও ট্রেনের কোচগুলিকে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও মোবাইল ফোনে ইউটিএস অ্যাপ থেকে অসংরক্ষিত আসনের দৈনিক ও মাসিক টিকিট কাটার বন্দোবস্ত তো থাকছেই। তৈরি আরপিএফও। জিআরপি–র পাশাপাশি রাজ্য পুলিশেরও সহযোগিতা নেবে রেল। আলোচনা চলছে রাজ্যের ভেতরেই ভাগীরথী বা কবিগুরু এক্সপ্রেসের মতো কিছু সংরক্ষিত আসনের ট্রেন চালানো নিয়েও।
তবে সব কিছুই নির্ভর করছে দিল্লির ওপর। সেখান থেকে আদর্শ আচরণবিধি এলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সব ঠিক হবে। উল্লেখ্য, লকডাউন চলাকালে এ রাজ্যে প্রতিদিনই মালগাড়ি বা পার্সেল এক্সপ্রেস ছাড়াও স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন চালাচ্ছে রেল। শিয়ালদা ডিভিশনেই রয়েছে ৬০ জোড়া ট্রেন। তবে ট্রেনগুলি শুধুমাত্র রেলকর্মীদের জন্য।
রাজ্য ও রেল কর্তাদের মধ্যে বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। প্রথমে ঠিক হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার মেট্রো রেলের সঙ্গেই নবান্নে দুই আঞ্চলিক রেলের প্রতিনিধিরাও রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। কিন্তু পরে বৈঠক হয় শুধুই মেট্রো রেলের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে নির্দেশিকা এলেই রাজ্য সরকার এবং পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব রেলের মধ্যে বৈঠক হবে। সেখানেই ঠিক হবে চূড়ান্ত বিষয়গুলি। তবে তার আগে রেল নিজেকে প্রস্তুত রাখছে। সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমান, কলকাতা মেট্রো চালুর পরই শুরু হবে লোকাল ট্রেন চালানোর প্রক্রিয়া। রেলেরও একটা মহল চাইছে চলতি মাসেই লোকালের যাত্রা শুরু করতে।
রেলের সিইও ভি কে যাদবও শনিবার জানিয়ে দিয়েছেন, শিগগিরই চালু হচ্ছে কলকাতা মেট্রো। ১৩ সেপ্টেম্বর নিট পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬৬টি বিশেষ মেট্রো চলার বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত। ১৪ তারিখ সাধারণ যাত্রী নিয়ে মেট্রো শুরু হলে, ২১ থেকেই কলকাতায় চলতে পারে লোকাল ট্রেনও। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রস্তুতি ধরা পড়ছে রেলে।