দেশের জনগণনা আদৌ এবছর হবে? এখনও চালু হয়নি ডিজিটাল সেন্সাসের অ্যাপ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ২০২৪ সাল শেষের পথে। অথচ, এখনও জনগণনার প্রাথমিক কাজই শেষ করে উঠতে পারল না এনডিএ সরকার। শেষবার দেশে জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। আর এদিকে, প্রবল তোড়জোড় সত্ত্বেও তৈরি হল না ডিজিটাল সেন্সাসের মোবাইল অ্যাপ। আগামী মাসজুড়ে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট। সঙ্গে ১৫ রাজ্যের ৪৭ আসনে উপ নির্বাচন। বাকি রইল শুধু ডিসেম্বর। অতএব সেন্সাসের কাজ এই বছরও পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হওয়ার যে সম্ভাবনা নেই। তা বলাই বাহুল্য। তাহলে, সেন্সাস যে চলতি বছরও হবে না, সেটা কি নির্ধারিতই ছিল? কারণ, জনগণনার জন্য যেখানে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন, সেখানে এবার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ১৩০৯ কোটি টাকা! গত আর্থিক বছরে এই বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫৭৮ কোটি টাকা। চলতি বছরে সেন্সাস সম্পন্ন হবে বলেই নিশ্চিত ছিল সরকার। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সেপ্টেম্বরে যে প্রাথমিক কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল, অক্টোবরেও তার কোনো লেশ দেখা গেলোনা।
স্বাভাবিক ভাবে, সেন্সাস প্রক্রিয়া ২০২০ সালে শুরু হয়ে রিপোর্ট প্রকাশের কথা ছিল ২০২১’এর মার্চ মাসে। কোভিড অতিমারী তখন বাধা হয়েছিল। কিন্তু, সবকিছু স্বাভাবিকতায় ফিরলেও সেন্সাসই শুধু কেন শুরু করা যাচ্ছে না, তার কোনও সদুত্তর দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পরিকল্পনা ছিল একটি অ্যাপের যেখানে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে একটি করে আইডি নম্বর তৈরি করতে হবে। তারপর সেখানেই ওটিপি ম্যাচ করার পর চলে আসবে সেন্সাস ফর্মের লিঙ্ক। তারপর আবেদনপত্রে তথ্য পূরণ করে আপলোড। সবশেষে বাড়িতে আসবেন ফিজিক্যাল এন্যুমারেটর অর্থাৎ গণনাকারী। তখন তাঁকে ওই আইডি নম্বর জানালে তিনি সঙ্গে থাকা মোবাইল অথবা ট্যাবলেটে তথ্য পরিসংখ্যান মিলিয়ে নেবেন। এভাবে অনেক সময় ধরে এন্যুমারেটরদের একটি বাড়িতে বসে থাকতে হবে না। দ্রুত হবে কাজ। কিন্তু সমস্যা হল, কমবেশি ১৪১ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে ৭১ কোটির কাছে আছে স্মার্টফোন। অর্থাৎ, ডিজিটাল বিপ্লব যতটা নরেন্দ্র মোদির ভাষণে, ততটা তৃণমূল স্তরে নেই। সরকারি সূত্রের খবর, এখনও খুব নগণ্য সংখ্যক মানুষই নিজেরা ওয়েবসাইটে আয়কর রিটার্ন জমা করেন। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল সেন্সাস সম্পূর্ণভাবে সফল হওয়া তো দূরঅস্ত।
সেন্সাস অবিলম্বে হওয়াটা সবার আগে দরকার কারণ জনগণনার রিপোর্টের উপর নির্ভর করেই স্থির হয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, উন্নয়ন সহ দেশের যাবতীয় প্ল্যানিং। দেড় দশক আগের সেন্সাসে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটির কিছু বেশি। বেসরকারিভাবে এখন জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ছাপিয়ে গেলেও তার প্রতিফলন সরকারি খাতায় নেই। ফলে সব হিসেবের মাপকাঠি ওই ২০১১’র সেন্সাস। বাকি যা সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সবটাই আন্দাজের ভিত্তিতে। ফলে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে কোটি কোটি মানুষ।
জনগণনা শুরু যদি হয়ও, তার তথ্য আপলোড, ভেরিফিকেশন, ইত্যাদি এ বছর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অথচ ২০২৬ সালে ডিলিমিটিশন করতেই হবে। সেন্সাস সেক্ষেত্রে শেষ করতে হবে ২০২৫’এ। এই সময়সীমা ধরে রাখতে পারবে মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার – উঠছে প্রশ্ন।