জগদ্ধাত্রীপুজোর সূচনার সঙ্গে কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বন্দি দশার ইতিহাস জড়িত
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলায় জগদ্ধাত্রীপুজো চালুর ৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কারাবন্দি থাকায় দুর্গাপুজোয় অংশ নিতে না পেরে পরে জগদ্ধাত্রী আরাধনা শুরু করেছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা। তখন নবাবি মসনদে আলিবর্দি খাঁ। বাংলার বিভিন্ন রাজপরিবার ও জমিদারদের থেকে খাজনা যাচ্ছে নবাবের কাছে। কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও সেই খাজনা দিতেন।
একবার রাজা খাজনা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজা বন্দি। রাজ পরিবারের পাশাপাশি প্রজাদেরও মন খারাপ। তাই রাজবাড়িতে সেবার দুর্গাপুজো করার মতো মানসিকতা কারও ছিল না। তারপর রাজা যখন বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন, তখন দুর্গাপুজো শেষ। দেবীর বিসর্জন হয়ে গিয়েছে।
এদিকে দেবীর আরাধনা করতে না পারায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রে প্রচণ্ড মন খারাপ। কথিত আছে, সেই রাতেই দেবী জগদ্ধাত্রী স্বপ্নে রাজাকে দর্শন দেন। দেবী তাঁকে আরাধনা করার নির্দেশ দেন। তাঁর পুজো দুর্গাপুজোর সমান বলেও দেবী রাজাকে জানান। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়। এখানেও শুধু নবমী তিথিতেই দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করা হয়।
এছাড়াও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে গ্রেপ্তারের পিছনে আরও একটি কারণ ছিল বলে অনেকে মনে করেন। সেই কাহিনী অনুযায়ী, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ছেলে শিবচন্দ্রের সঙ্গে আলিবর্দির খাঁ তাঁর দৌহিত্রীর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। নবাব নিজেই সেই প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু শাক্ত পরিবারের রাজার এতে সায় ছিল না।
কৃষ্ণনগরের ইতিহাস গবেষক সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কঠোর শাক্ত হিন্দু ছিলেন। তিনি নবাবের সেই প্রস্তাব মেনে নেননি। এমনও গল্প প্রচলিত যে, আলিবর্দির কাছে রাজা কিছুদিন সময় চেয়ে নেন। এরপর তিনি নবদ্বীপের তান্ত্রিক কালীশঙ্কর ঠাকুরের শরণাপন্ন হন। কালীশঙ্কর নাকি তন্ত্রের সাহায্যে আলিবর্দির দৌহিত্রীকে মেরে ফেলেন। তা জানতে পেরে নবাব রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও তাঁর ছেলেকে বন্দি করেন।