ফরাসডাঙায় বনেদিবাড়ির ঠাকুরদালান থেকে কীভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠলেন জগদ্ধাত্রী?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সাতের দশকে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো হত ২৬টি। এখন পুজোর সংখ্যা ১৭৭। একাধিক বনেদিবাড়ির পুজো সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। আজও তর্ক চলে জগদ্ধাত্রী পুজো আগে কোথায় হয়েছে? চন্দননগর না কৃষ্ণনগরে। চন্দননগরের প্রথম বা দ্বিতীয় পুজোর ইতিহাস অবশ্য জানা যায়। থিমের বাড়বাড়ন্তেও সব ঢাকা পড়েনি।
চন্দননগরে ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। ধনবান ইন্দ্রনারায়ণের কাছে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পর্যন্ত টাকা ধার নিতেন। দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল। সেই ইন্দ্রনারায়ণের উদ্যোগে চাউলপট্টি বা নীচেপট্টিতে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোটি হয়। কেউ কেউ দাবি করেন, একদা পুজো হত চৌধুরী বাড়িতে। পরে তা সর্বজনীন করতে চাউলপট্টিতে আনা হয়। এটিই চন্দননগরের আদিপুজো। চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী চন্দননগরের আদিমা হিসাবে পরিচিত। এখনও আদিমার ভাসান না হলে অন্য পুজোর ভাসান হয় না। জনশ্রুতি, পুজোর সংকল্প আজও চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামেই হয়।
চাউলপট্টির ব্যবসায়ীদের মতোই কাপড়পট্টির বস্ত্র ব্যবসায়ীদেরও রমরমা করবার ছিল। সেকালে চন্দননগর থেকে মসলিন কাপড় যেত ফ্রান্সে। জনশ্রুতি, চাউলপট্টির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুজো নিয়ে বিবাদেই দ্বিতীয় পুজোর আয়োজন হয় কাপড়পট্টি বা উঁচুপট্টিতে। সেই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্ভ্রান্ত বস্ত্র ব্যবসায়ী শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃতীয় পুজোটি উড়েপাড়ায় শুরু হয়েছিল। বাংলার ১২৪২ সনে। বর্তমানে সেই জায়গার নাম বাগবাজার।
চন্দননগরের পুজো নানান রীতিতেও অনন্য, তেঁতুলতলা সর্বজনীনের পুজোয় দেবীবরণ করেন পুরুষরা। পুরুষরা নারীবেশে দেবীকে বরণ করেন। শাড়ি এবং শাঁখা-সিঁদুরে সাজেন তাঁরা। আজও দশমীতে ওই রীতিতে বরণ হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের কিছু বছর পর তেঁতুলতলার পুজো শুরু হয়েছিল। পুজো শুরু করেন দাতারাম সুর। তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বিশ্বস্ত এক কর্মচারী। বারবার জায়গা বদলের পর এখন তেঁতুলতলাতে এসেছে এই পুজো।