রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

স্বচ্ছতার সঙ্গেই কোভিড-যুদ্ধের সরঞ্জাম ক্রয়, পরিকাঠামো গঠনে জোর রাজ্যের  

September 7, 2020 | 2 min read

কোভিড-যুদ্ধে কোনওপ্রকার আর্থিক অনিয়ম হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট পেশ করে সাফ জানিয়ে দিল তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে পরোক্ষে জবাব রাজ্যপালকেও। ফলত, এবার তাঁর অভিযোগের সারবত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে, কোভিড মোকাবিলায় প্রথম দিকে যে খানিকটা অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল, তা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, অভিজ্ঞতার ঘাটতিই এর প্রধান কারণ।

কারণ, স্প্যানিশ ফ্লু’র পর এমন ভয়াবহ মহামারীর সঙ্গে যুদ্ধে নামতে হয়নি কোনও দেশকেই। মাঝে এশিয়ান ফ্লু, এইডস, সোয়াইন ফ্লু, জিকা ভাইরাস তাণ্ডব দেখিয়েছে। কিন্তু কোভিডের মতো মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাসের মহামারী ফিরল প্রায় একশো বছর পর। একেবারে নতুন গোত্রের ভাইরাস। অদৃশ্য-অচেনা শত্রু। চরিত্রেও বেয়াড়াপনা। ফলে প্রথমের দিকে ধাক্কা সামলাতে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়। অগোছালো হয়ে পড়েছিল সবকিছুই। আর সেই অগোছালো মানেই ‘অনিয়ম’ নয়। সমূহ কাজই হয়েছে স্বচ্ছতার সঙ্গে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই কিট সহ হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নয়ন—সবই হয়েছে সরকারি নিয়মনীতি মেনে। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু, একটা টাকাও এদিক-ওদিক হয়নি। তদন্ত রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে কমিটি।

কোভিড-যুদ্ধে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটায় অনিয়ম নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন। একাধিক ট্যুইট করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর তদন্ত কমিটি গঠন নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। একটি ট্যুইটে যেমন তিনি বলেছেন, ‘মহামারী রোধে কেনাকাটার দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি আরও ধোঁয়াটে হচ্ছে। এটা কেমন তদন্ত? সরঞ্জাম কেনার পর তার অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকারি আমলাদের এই কাজ লজ্জাজনক। যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত তাঁরাই তদন্ত করছেন!’ মুখ্যমন্ত্রী কিংবা রাজ্য সরকার তাঁর এই অভিযোগে কর্ণপাত না করেই তদন্ত চালিয়ে যায়। তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনজনের কমিটিতে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং প্রশাসনিক সংস্কার ও কর্মীবর্গ দপ্তরের প্রধান সচিব অর্ণব রায়। মূলত এই তদন্ত কমিটিকেই নিশানায় রেখেছিলেন রাজ্যপাল। অন্য একটি ট্যুইটেও তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যত উচ্চপদস্থই হোন না কেন, আপনার চেয়েও উপরে সদা বিদ্যমান। এটা স্বচ্ছতা বজায় রাখার সময়। মানুষকে সব জানান, কত টাকার কেনাকাটা হয়েছে, কারা তা সরবরাহ করেছে, কে কে এই সিদ্ধান্তের শরিক—তা মানুষের নজরে রয়েছে।’

তদন্ত কমিটির নজরে অবশ্য কোনও অনিয়ম ধরা পড়েনি। নবান্ন সূত্রে খবর, দিন তিনেক আগে তদন্তের কাজ শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার কাছে রিপোর্ট দাখিল করেছে কমিটি। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোভিডের মোকাবিলায় যা কিছু কাজ হয়েছে, তা ত্রুটিমুক্ত। কী কী কাজ হয়েছে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকাও দাখিল করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, রাজ্যে ৮৪টি কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো গঠন করা হয়েছে। ভাইরাসরোধী বর্মবস্ত্র পিপিই কিট কেনা হয়েছে। স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস কেনা হয়েছে। কেন্দ্র বিভিন্ন সরঞ্জাম পাঠালেও তা ছিল চাহিদার চেয়ে অনেক কম। ফলে রাজ্যের উদ্যোগে বহু জিনিসপত্র কিনতে হয়েছে। প্রথমের দিকে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কাজকর্ম কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়েছিল। পরে সুসংহতভাবেই কেনাকাটা করা হয়েছে। নগরোন্নয়ন দপ্তর, পঞ্চায়েত দপ্তর এবং ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের কোনও নিয়মনীতি লঙ্ঘিত হয়নি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nabanna, #covid-19

আরো দেখুন