অসমে জন্মেও বাঙালির ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন ভূপেন হাজারিকা

তাই তিনি চিরকাল রয়ে গেছেন বাঙালির মনের মণিকোঠায়।

September 8, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

অসমে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন বাঙালির ঘরের ছেলে। তিনি ভূপেন হাজারিকা। সারা জীবন ধরে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন একের পর এক অসাধারণ বাংলা গান। তাই তিনি চিরকাল রয়ে গেছেন বাঙালির মনের মণিকোঠায়।

আজ তাঁর জন্মদিনে প্রিয় শিল্পী সম্পর্কে জেনে নিন, এই তথ্যগুলিঃ  

সঙ্গীত জীবনে প্রবেশ

পড়াশোনা শেষে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেই কলকাতায় চলে আসেন ভূপেন হাজারিকা। চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন।  পাশাপাশি আইপিটিএর (ভারতীয় গণনাট্য সংঘ) সক্রিয় কর্মী ও নেতা হিসেবে গণনাট্যের কাজও চালিয়ে যান। এ সময় তাঁর গাওয়া গণসংগীতগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

শৈশবেই ভূপেন হাজারিকা গীতিকার আনন্দীরাম দাস, পার্বতী প্রসাদ বড়ুয়া ও কমলানন্দ ভট্টাচার্যের মাধ্যমে স্থানীয় বরগীত, গোয়ালপাড়ার গান, চামজদুরের গান, বিহুগীতসহ গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন ও প্রভাবিত হন। পরবর্তীকালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জ্যোতিপ্রসাদ প্রভাবিত করেছিলেন ভূপেনকে। হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যের ওস্তাদ বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার হাত ধরেই সংগীতে পথচলা শুরু হয় ভূপেনের। 

অসমিয়া চলচ্চিত্রে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।  

মুক্তি যুদ্ধের গান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গান, ‘জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,/জয় জয়  মুক্তিবাহিনী/ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে/মৈত্রীর কাহিনি।’ গানটি সবার মন ছুঁয়ে যায়। 

প্রিয়ংবদার সঙ্গে বিচ্ছেদ

১৩ বছর সংসার করার পর ১৯৬৩ সালে প্রিয়ংবদা প্যাটেল ও ভূপেন আলাদা হয়ে যান। ভূপেনের মৃত্যুর এক বছর পর কানাডা প্রবাসী প্রিয়ংবদা বিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে আসামের একটি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে বলেন, লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ভূপেনের প্রণয়ের কারণেই নাকি তাঁরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে আহত হন ভূপেনের ৩৯ বছরের সঙ্গিনী কল্পনা লাজমি।

প্রেম

প্রিয়ংবদার সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। কিন্তু একসঙ্গে থাকেননি। ভূপেন আরেকটি বিয়ে করতে ভয় পেতেন। তবে কল্পনা লাজমির সঙ্গে তার ছিল অসমবয়সী প্রেম। কল্পনার মামা ছিলেন গুরু দত্ত। কিশোর বয়স থেকেই কল্পনা লাজমি  ভক্ত ছিলেন ভূপেন হাজারিকার। এই অগোছালো, বেহিসাবি মানুষটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন কল্পনা। ১৯৭৬ সাল কল্পনা এবং ভূপেন একটি ফ্ল্যাটে একত্রে বাস করতে শুরু করেন। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে ভূপেন কল্পনাকে তার সঙ্গী বলে পরিচয় দিতে থাকেন।

পুরস্কার

ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পদকে সম্মানিত হয়েছেন ভূপেন হাজারিকা। ২৩ তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৭৫) শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র ‘চামেলী মেমসাহেব’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। পদ্মশ্রী লাভ করেন ১৯৭৭ সালে। 

শ্রেষ্ঠ লোকসংগীত শিল্পী হিসেবে অল ইন্ডিয়া ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশনের পুরস্কার পান ১৯৭৯ সালে, আসাম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার (১৯৮৭), দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২), জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচাকের পুরস্কার অর্জন। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কার পান ১৯৯৩ সালে। 

এছাড়া পেয়েছেন পদ্মভূষণ (২০০১), আসামরত্ন (২০০৯), সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার (২০০৯) ও  ভারতরত্ন (২০১৯)।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen