দেশজুড়ে একচ্ছত্র ক্ষমতা কায়েমের লক্ষ্যে বিজেপি ফের রাজ্য ভাগের পথে এগোচ্ছে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: চিরকালই বড় রাজ্য ভেঙে টুকরো করে দেওয়ার পক্ষে গেরুয়া শিবির। এর নেপথ্যে কিন্তু শুধু উন্নয়ন নয়। রাজ্যের স্বার্থকে শিখণ্ডী করে আসলে ক্ষমতার অলিন্দে অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা। বিরোধী ভোটব্যাঙ্কের কোমর ভেঙে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম। সেই কারণেই রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠনের ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে মোদী সরকারের অন্দরে। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের ইঙ্গিত কিন্তু তেমনই। এর ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে রাজ্য ভাগ কি এবার নিশ্চিত?
বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের যুক্তি, রাজ্য ছোট হলে প্রশাসন পরিচালনা অনেক সহজ হয়। বড় রাজ্যে সর্বত্র উন্নয়ন সমানভাবে পৌঁছয় না। তৈরি হয় বৈষম্য। তাই প্রথমবার ক্ষমতাসীন হয়েই এনডিএর চালিকাশক্তি অটলবিহারী বাজপেয়ি ও লালকৃষ্ণ আদবানি একসঙ্গে তিনটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন—মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তিশগড়, বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশ দ্বিখণ্ডিত করে উত্তরাখণ্ড। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইউপিএ আমলেও অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবিতে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের আন্দোলনকে লাগাতার সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিদায়বেলায়, ২০১৪ সালে সেই দাবি মেনে নেয় ইউপিএ সরকার। নতুন রাজ্যের জন্ম হয়—তেলেঙ্গানা। সেই শেষ। এরপর আর কোনও নতুন রাজ্য গঠিত হয়নি।
কিন্তু সেন্সাস, ডিলিমিটেশনের জেরে লোকসভা আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি একপ্রকার নিশ্চিত। আর তাই ফের রাজ্য ভাগের অঙ্ক কষতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। অর্থাৎ, আরও একবার নতুন রাজ্য। ছোট রাজ্য। সেই কারণেই ডিলিমিটেশনের পর রাজ্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছে। ১৯৫৩ সালে শেষবার রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল। ২০০২ বা ২০১৪ সালে কিন্তু কোনও কমিশন গঠন হয়নি। অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইনের মাধ্যমেই ওই রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়। এবার মোদি সরকার তথা বিজেপি চাইছে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করতে। এই পরিকল্পনার পিছনে আসল কারণ কী? উত্তর থেকে দক্ষিণ—জনসংখ্যা ও লোকসভা আসনের ভিত্তিতে বিজেপি এমনভাবে নতুন রাজ্য গঠন করতে চায়, যাতে তাদের ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী হয়। মনে করা হচ্ছে, ঠিক যে অংশগুলিতে বিরোধীদের সমর্থন ও আসন বেশি, সেগুলিকে ভোটের ফর্মুলায় ফেলে পুনর্বিন্যাস করা হবে। বিভাজন এমনভাবে হবে, যাতে ভোটব্যাঙ্কের নিরিখে ক্ষতি হয় বিরোধীদের।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদর্ভ এলাকা ঐতিহ্যগতভাবেই কংগ্রেসের পক্ষে। যদিও ২০১৪ সাল থেকে সেই প্রবণতায় ভাটা পড়েছে। তবু বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া এবং পশ্চিম মহারাষ্ট্রের ভোটব্যাঙ্ক তথা আসন প্রাপ্তির সমীকরণ বিজেপির একক গরিষ্ঠতায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বস্তুত, এখন আর বিজেপি এককভাবে এই রাজ্যে গরিষ্ঠতা পাওয়ার আশা করছে না। সরকার গড়তে সর্বদাই কোনও না কোনও জোট শরিক লাগবে। এই নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে চায় না গেরুয়া শিবির। একইভাবে রয়েছে মুসলিম ও দলিত ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে দেওয়ার সমীকরণও। আর এই অভিযোগ বারবার করছে বিরোধীরা। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে। এমনটা হলেই সুবিধা বিজেপির।
একঝাঁক বড় রাজ্য ভেঙে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবির মধ্যে সবার আগে রয়েছে মহারাষ্ট্র ভেঙে বিদর্ভ রাজ্য। এছাড়া কর্ণাটক ভেঙে দক্ষিণ কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশে বুন্দেলখণ্ড ও পূর্বাঞ্চল। সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে দাবি না উঠলেও বঙ্গ বিজেপির একাংশ দাবি তুলেছে বাংলা ভাগের। তারা চায় পৃথক উত্তরবঙ্গ। আবার সম্প্রতি বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে বিহারের তিনটি জেলা এবং বাংলার মালদহ ও মুর্শিদাবাদকে নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের নেতা দুবে হঠাৎ বাংলা ও বিহারের জেলাকে জুড়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়ায় সন্দেহ জোরদার হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সবুজ সংকেত পেয়েই কি এই প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি?