শব্দের চেয়েও ছ’গুণ গতি, সফল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র
প্রথমবারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বারের প্রয়াসে মিলল সাফল্য। সোমবার সকালে ওড়িশার বালেশ্বরে হাইপারসনিক প্রযুক্তির সফল পরীক্ষা করল ডিআরডিও। সেই সঙ্গে হাইপারসনিক প্রযুক্তিধর দেশের তালিকায় আমেরিকা, চীন ও রাশিয়ার পরেই চতুর্থ দেশ হিসেবে জায়গা পাকা করে নিল ভারত। ডিআরডিও’র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, এই বিশেষ প্রকল্পটি সার্বিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। কারণ, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের মাটিতেই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব হবে। হাতে আসবে এমন শক্তিশালী, তড়িৎগতির মিসাইল, যা শব্দের চেয়েও ছ’গুণ গতিতে ছুটতে সক্ষম। প্রতি সেকেন্ডে দু’কিলোমিটার পথ অনায়াসে অতিক্রম করবে সেই মিসাইল। এর পাশাপাশি সোমবারের গোটা পরীক্ষা-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি মেনে সম্পন্ন হওয়ায় তা ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর মিশনকেও বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। যে কারণে ডিআরডিওর বিজ্ঞানীর অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্যুইটারে লিখেছেন, হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশের এই ক্ষমতা রয়েছে। কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও।
ডিআরডিও সূত্রে খবর, সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের এপিজে আব্দুল কালাম টেস্টিং রেঞ্জ থেকে হাইপারসনিক টেস্ট ডেমনস্ট্রেটর ভেহিকল-টি উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণে কাজে লাগানো হয় অগ্নি মিসাইল বুস্টার। যা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় হাইপারসনিক ভেহিকলটিকে নিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর স্ক্র্যামজেট প্রোপালশন ইঞ্জিন সফলভাবে চালু হয়। ডিআরডিও-র অধিকর্তা সতীশ রেড্ডি ও তাঁর সহযোগীরা জানিয়েছেন, ‘ভেহিকলটি পরীক্ষার যাবতীয় মাপকাঠি সফলভাবে অতিক্রম করেছে।’ পাশাপাশি অগ্নিপরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিও। যে কারণে আপাতত পাখির চোখ আগামী পাঁচ বছর। যার মধ্যে দেশের মাটিতে হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির কাজ সেরে ফেলার আশা দেখছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপারসনিকের চাইতে কয়েক দফা এগিয়ে থাকা এই প্রযুক্তি আগামী দিনে প্রতিরক্ষার নকশা বদলে দিতে পারে। শুধু গতির পাল্লাতেই হাইপারসনিক মিসাইল অনেকটা এগিয়ে নয়, একে নিয়ন্ত্রণ করাও অনেক বেশি সহজসাধ্য। পাশাপাশি, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পারমাণবিক অস্ত্র বহনের মতো কাজেও এর জুড়ি মেলা ভার।
গবেষকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সোমবার তিনি ট্যুইট করেন, প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত-এর লক্ষ্যকে উপলব্ধি করার জন্য ডিআরডিও-কে ধন্যবাদ জানাই। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাঁদের কুর্নিশ জানিয়েছি। গোটা দেশ আজ তাঁদের জন্য গর্বিত।’