ফালাকাটা উপনির্বাচনে রামের ভরসা হতে পারে বাম
গত লোকসভা নির্বাচনে বামের ভোটেই ফালাকাটায় বাজিমাত করেছিল বিজেপি। এবারের উপনির্বাচনেও রামের ভরসা হতে পারে বাম।
সূত্রের খবর, ২০১৮-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ও পরে ফালাকাটায় সিপিএমের বহু সক্রিয় নেতা বিজেপিতে চলে যান। এখন তাঁরা বিজেপির একাধিক পদে থেকে সংগঠনের কাজ করছেন। উপনির্বাচনের আগে এভাবেই বিজেপির ঘর আলোকিত করছেন সিপিএম নেতারা। তাই বিজেপির দাবি, ফালাকাটায় বাম বলে এখন কিছু নেই। দলের জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘বামফ্রন্ট এখন রামফ্রন্ট হয়ে গিয়েছে।’ তবে সিপিএমের পালটা দাবি, পরিস্থিতি এখন বদলেছে। দলের জেলা সম্পাদক মৃণাল কান্তি রায় বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী কিছু নেতা বিজেপিতে চলে গেলেও সাধারণ বাম সমর্থকরা পুনরায় সিপিএমে ফিরে আসছে।’
বামফ্রন্টের গত ৩৪ বছরের রাজত্বে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল ফালাকাটা। প্রয়াত যোগেশচন্দ্র বর্মন একবারের বিধায়ক ও তিন বারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে পরিবর্তনের ধাক্কায় ২০১১ থেকেই ফালাকাটায় সিপিমের শক্তিক্ষয় শুরু হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে ফালাকাটায় সিপিএম ভোট পেয়েছিল ৪২ শতাংশ। পরবর্তী পাঁচ বছরে আরও ৫ শতাংশ বাম ভোট কমে যায়। গত ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে সিপিএম পেয়েছিল ৩৫ শতাংশ ভোট। কিন্তু গেরুয়া ঝড়ে ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের যেন অস্তিত্বের সংকট শুরু হয়। ফালাকাটা বিধানসভা আসনে সিপিএম গত লোকসভায় মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পায়। সংগঠনের বাকি ৩০ শতাংশ ভোটের অধিকাংশই চলে যায় বিজেপিতে। আর সেই ভোট পেয়েই ফালাকাটায় শক্তি বাড়ায় বিজেপি। বিশেষ করে এই আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে ২৭ হাজার ভোট বেশি পাওয়ায় উপনির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
সূত্রের খবর, সিপিএমের পার্টি মেম্বার, জেলা সদস্য এমনকি দলের প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই এখন বিজেপির ঘর সামলাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে প্রয়াত মন্ত্রী যোগেশচন্দ্র বর্মনের ছায়াসঙ্গীও রয়েছেন। এরকম ৫-৬ জন সক্রিয় সিপিএম নেতা এখন বিজেপির জেলা ও মন্ডল স্তরে নানা পদ পেয়েছেন। আবার বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনের কয়েকেজন নেতা সরাসরি বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। তা সত্ত্বেও এখনও বাম আদর্শ নিয়ে বহু প্রবীণ ও যুব নেতার নেতৃত্বে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকের বাড়িও ফালাকাটায়। কেন্দ্র ও রাজ্যের একাধিক নীতির প্রতিবাদে প্রায়দিনই ফালাকাটায় সিপিএমের কর্মসূচি হচ্ছে। সিপিএমের দাবি, বিজেপি ও তৃণমূলের দিকে চলে যাওয়া অনেকেই এখন ভুল বুঝতে পেরে দলে ফিরে আসছেন। ডিওয়াইএফআই-র জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ফালাকাটার বাপন গোপ বলেন, ‘দলে অনেকেই ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ যোগাযোগও রাখছেন। কারণ, সাধারণ সমর্থকরা এটা বুঝে গিয়েছেন যে, তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।’ তবে রাজনৈতিক বিশেষঞ্জদের ধারণা, গত লোকসভা ভোটের হাওয়া উপনির্বাচনে পুরোপুরি কাজ করবে না। এই নির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী থাকবে। কিছুটা হলেও বামভোট ঘুরে আসবে।
দলের জেলা সম্পাদক মৃণালকান্তি রায় বলেন, ‘দলত্যাগী বাম নেতাদের এখন আর আমাদের প্রয়োজন নেই। তবে সাধারণ ভোটারদের অনেকেই ফিরে আসছেন। উপনির্বাচন হলে আগের থেকে আমরা অবশ্যই ভোট বেশি পাব।’ এদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘২০১১ সালে বাম ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের ঘরকে আলোকিত করেছিল। এখন সিপিএম বলে কিছু নেই। সাধারণ মানুষ যে বিজেপির পক্ষে আছে, তা উপনির্বাচনের ফলাফলেই স্পষ্ট হবে। আর ফালাকাটায় সিপিএমের অনেক নেতা এখন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদেরকে সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। এখন ওঁরা বামফ্রন্ট নয়, রামফ্রন্ট হয়ে কাজ করছেন।’