নেটপাড়া আনন্দ বোসকে বলছে হীরক রাজা, জানুন কী বলছে রাজভবন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ২৩ নভেম্বর বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে দু’বছর পূর্ণ হয়েছে সিভি আনন্দ বোসের। সেই উপলক্ষ্যে রাজভবনে বসল বোসের মূর্তি। মূর্তির উন্মোচন করলেন খোদ রাজ্যপাল নিজেই। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। নিজেই নিজের মূর্তি উন্মোচন! প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও মূর্তি উন্মোচন হয়নি। মূর্তিটি উপহার দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যপালের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে রাজভবনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন রাজ্যপাল। অনুষ্ঠানে ২০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বৃক্ষরোপন-সহ চিত্রপ্রদর্শনী, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল রাজভবনে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নিজের মূর্তি উন্মোচন করেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপাল নিজেই যেভাবে নিজের মূর্তি উন্মোচন করেছেন, তা ভালোভাবে দেখছে না বিরোধীরা। যা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কংগ্রেস রাজ্যপালের মূর্তি উন্মোচনকে ‘লজ্জাজনক’ বলে কটাক্ষ করেছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্যপাল একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যে দল তাকে প্রতিনিধি করা পাঠানো হয়েছে সেই দলের প্রধানমন্ত্রী নিজের নামে স্টেডিয়াম তৈরি করেছেন। রাজ্যপাল প্রধানমন্ত্রীর দেখানো সেই পথ অনুসরণ করেছেন। এটা লজ্জার বিষয়।
রাজভবনের তরফে এক আধিকারিক বিবৃতিতে জানান, “অনেক শিল্পী তাদের শিল্পকর্ম রাজ্যপালকে উপহার দেন। অনেক চিত্রশিল্পী মাননীয় রাজ্যপালের প্রতিকৃতি এঁকে তাঁকে উপহার দিয়েছেন। অনুরূপভাবে, এক সৃষ্টিশীল ভাস্কর মাননীয় রাজ্যপালের একটি মূর্তি তৈরি করে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনাকে ‘নিজের মূর্তি উন্মোচন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।” উল্লেখ্য, মূর্তিটি গড়েছেন শিল্পী পার্থ সাহা। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি এই মূর্তি তৈরি করেছেন। রাজ্যপালকে সশরীরে না দেখে, শুধুমাত্র ছবি দেখে ফাইবার দিয়ে মূর্তি তৈরি করেছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে রাজভবন তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “এই বিবৃতিটি ২৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে রাজভবনে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপালের উপস্থিতিতে একটি আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এবং ঘটনাগুলি স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত। কিছু অংশে প্রচারিত ভুল ব্যাখ্যাগুলির বিপরীতে, পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপাল ড. সি. ভি. আনন্দ বোস তাঁর উদারতা এবং নিষ্ঠার জন্য সুপরিচিত। তিনি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সংগ্রামের প্রতি গভীরভাবে সংবেদনশীল। তাঁর স্বচ্ছতা এবং মানুষের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে যে প্রকৃত শাসন কেবল জনগণের সঙ্গে প্রকৃত সংযোগের মাধ্যমেই বিকশিত হতে পারে। এই মানবিক গুণাবলির জন্যই তিনি ‘জনতার রাজ্যপাল’ নামে পরিচিত হয়েছেন, যা তাঁর জনগণের প্রতি নিবেদিতপ্রাণতা প্রকাশ করে।
২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর একটি বিশেষ মুহূর্তে মাননীয় রাজ্যপাল একটি আবক্ষ মূর্তি গ্রহণ করেন, যা এক ‘সাধারণ’ ভাস্কর তৈরি করেছিলেন। এই ভাস্কর কখনো মাননীয় রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি বা কখনো রাজভবন, কলকাতা পরিদর্শন করেননি। তিনি পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন এবং তাঁর শিল্পকর্মটি রাজ্যপালের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা থেকে উৎসারিত। এই মূর্তি, যা মাননীয় রাজ্যপালের নেতৃত্বের দুই বছরের পূর্তি উদযাপনের জন্য নিবেদিত, এক অভূতপূর্ব শ্রদ্ধার প্রকাশ।
পশ্চিমবঙ্গের জনগণের প্রকৃত রক্ষক হিসেবে মাননীয় রাজ্যপাল, পরিবারের প্রধানের মতো সাধারণ মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান ও গ্রহণ করেছেন। আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন ছিল একান্তভাবে একজন সাধারণ মানুষের হৃদয়ের ইচ্ছাকে পূর্ণতা দেওয়ার মুহূর্ত। এটি ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক আত্ম-উন্মোচন, বরং ছিল তাঁর বিনম্রতা এবং জনগণের সম্মিলিত আবেগকে সম্মান জানানো।
এই অসাধারণ শ্রদ্ধার জন্য মাননীয় রাজ্যপাল গভীরভাবে কৃতজ্ঞ এবং তিনি এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ও শিল্প ঐতিহ্য উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দু এই ঐতিহ্য।”