দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ মুছে ফেলার দাবি নাকচ সুপ্রিম কোর্টে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকবে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি। এই শব্দ বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে যে সমস্ত আর্জি এসেছে মামলার,তা খারিজ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই শব্দগুলি বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সহ অনেকে। সেই আর্জিই হল খারিজ।
মামলা ওঠে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে। এদিন আদালত জানায়, ১৯৪৯ সালের সংবিধানের সঙ্গে ১৯৭৬ সালের প্রস্তাবনার বিশেষ অমিল নেই। প্রধান বিচারপতি খান্না বলেন, ১৯৭৬ সালে সংশোধনীতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটির প্রস্তাব করা হলেও ১৯৪৯ সালের সংবিধানের সঙ্গে তার চরিত্রগত মিল রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ব্যাখ্যা দেন, ভারতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটির অর্থ কল্যাণকর বা ‘সেবামূলক রাষ্ট্র’। অন্যদিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ হল ভারতীয় সংবিধানের ভিত্তিভূমি। উল্লেখ্য, ভারত রাষ্ট্রের পরিচয় হিসাবে আগে থেকেই সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ছিল সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক এবং প্রজাতান্ত্রিক, এই তিনটি শব্দ। ১৯৭৬ সালে তার সঙ্গে যুক্ত হয়, নতুন দুটি শব্দ।
১৯৪৯ সালে গৃহীত সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি ছিল না। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তা প্রস্তাবনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সঙ্গে ছিল ‘অখণ্ডতা’ শব্দটিও। কিন্তু ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি বাদ দিতে দীর্ধদিন ধরেই সচেষ্ট বিজেপি। সেই কারণে শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় ও বলরাম সিং। তাঁদের যুক্তি ছিল, সংবিধানের প্রস্তাবনা এভাবে সংশোধন করা যায় না।
বিচারপতি কুমার জানান, সংসদ প্রস্তাবনা সংশোধন করা যাবে না, এমন কোনও বিধিনিষেধ নেই। পরে রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাও বলেন, ‘সংবিধানের ৩৬৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ প্রস্তাবনাও সংশোধন করতে পারে। ফলে সেই সময় সংসদ যা করেছে, তাকে খারিজ করা যায় না।’
উল্লেখ্য, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। ২০১৫ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে তৎকালীন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ বলেন, ‘‘বি আর অম্বেডকর ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাখেননি। ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দদু’টি যোগ হয় সংবিধানের প্রস্তাবনায়।’’ ওই দিন তিনি আরও বলেছিলেন, ভারতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির খুবই অপব্যবহার হয়। অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত। ইংরেজি ‘সেকুলার’ শব্দটির হিন্দি অর্থ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নয় বলেও রাজনাথ দাবি করেন। তিনি বলেন ‘সেকুলার’ শব্দের হিন্দি অর্থ ‘পন্থ-নিরপেক্ষ’ বা গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ। সে সময় রাজনাথের এই বক্তব্য নিয়ে বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।