বহুতলে ফ্ল্যাটের স্বপ্নে স্ত্রী ও ভাইকে নিয়েই ব্যাঙ্ক লুট!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হাউসকিপিং স্টাফ। বেতন আর কতই বা হবে? সেই হাতেগোনা টাকায় স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয়। কারণ, তার স্বপ্ন- রাতারাতি কোটিপতি হওয়া। আর শখ? ‘টাওয়ারওয়ালা’ বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকার! কিন্তু হাল ছাড়েনি আরিফ হোসেন। বরং শুরু হয় ‘প্ল্যানিং’। ব্যাঙ্কের ভল্ট ভাঙার। কারণ, সেখান থেকে বড়সড় অঙ্কের টাকা হাতসাফাই করতে পারলেই কেল্লাফতে। নামজাদা আবাসনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, টাকার বিছানায় ঘুমানো— স্বপ্ন একেবারে হাতের মুঠোয়।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ব্যাঙ্কের বাটানগর শাখার সার্ভিস ম্যানেজার ও কোষাধ্যক্ষের বিশ্বাস অর্জনের কাজ শুরু হয় পরিকল্পনামাফিক। কিছুদিনের মধ্যে সে এতটাই আস্থাভাজন হয়ে ওঠে যে, এই দুই আধিকারিক নিজের কাছে চাবি না রেখে তাকে ভল্ট সহ ব্যাঙ্কের চাবি রাখার দায়িত্ব দেন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভুল করেনি সে। ভল্ট সহ ব্যাঙ্কের একাধিক চাবির ডুপ্লিকেট তৈরি করে ফেলে। লক্ষ্য ছিল, ভল্ট থেকে রোজ অল্প অল্প করে টাকা সরানো।
কিন্তু একবছর ধরেও সেই পরিকল্পনা কাজে ফলাতে পারেনি সে। উল্টে ব্যাঙ্কের এক কর্মী ও গ্রাহকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় চাকরিটাই খোয়ায় তিন মাস আগে। বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আরিফ এরপর মরিয়া হয়ে ওঠে। ২২ নভেম্বর ব্যাঙ্ক বন্ধ হওয়ার পর স্ত্রী রুবিনা ও ভাই সোয়েবকে নিয়ে সটান হাজির হয় সেখানে। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ব্যাঙ্কের ভিতর ঢোকে। ভল্ট খুলে ৭৫ লক্ষ টাকা ও সোনার গয়না হাতিয়ে উধাও।
দুঃসাহসিক এই ব্যাঙ্ক লুটের তদন্তে নামে মহেশতলা থানা। প্রথমেই তারা বুঝতে পারে, ভিতরের লোক ছাড়া একাজ অসম্ভব। কারণ, কোনও তালাই ভাঙা হয়নি। এমনকী ভল্টও অক্ষত। পরিষ্কার হয়ে যায়, ডুপ্লিকেট চাবি দিয়েই খোলা হয়েছে ব্যাঙ্কের দরজা ও ভল্ট। আর যাতে কেউ চিনে না ফেলে, সেজন্য ভেঙে দেওয়া হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ব্যাঙ্কের সমস্ত স্থায়ী, অস্থায়ী ও চুক্তি কর্মী, আউটসোর্সিং ও হাউস কিপিংয়ের স্টাফদের মোবাইল নম্বর নিয়ে শুরু হয় কাঁটাছেড়া। তাতেই দেখা যায়, আরিফ নামে এক ব্যক্তির ফোনের লোকেশন শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাত আটটা নাগাদ ছিল ব্যাঙ্কের সামনে। এমনকী ব্যাঙ্কের ভিতরেও তার ফোনের টাওয়ার মেলে। টানা জেরার মুখে ভেঙে পড়ে আরিফ। জানায়, স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে এই কাজ করেছে সেই। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকেই। উস্তি ও উলুবেড়িয়ায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় নগদ ৬৬ লক্ষ টাকা ও সোনার অলঙ্কার। রবিবার ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘নিরাপত্তায় বিস্তর ফাঁক আছে। এটা ব্যাঙ্ককে জানানো হয়েছে।’