কেন্দ্রের দেওয়া শর্ত পূরণ করার পরেও একাধিক প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছে মোদী সরকার
বিপুল কর্মযজ্ঞে সামান্য কিছু অনিয়মের ছুতোয় কেন্দ্রের মোদী সরকার বাংলার উপর মনরেগা আইনের ২৭ নম্বর ধারা আরোপ করে রেখেছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রমদিবস সৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। বছর বছর এই খাতে খরচ হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিপুল কর্মযজ্ঞে সামান্য কিছু অনিয়মের ছুতোয় কেন্দ্রের মোদী সরকার বাংলার উপর মনরেগা আইনের ২৭ নম্বর ধারা আরোপ করে রেখেছে। এই ধারা লাগু থাকলে কোনও রাজ্যকে নতুন করে প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া যায় না। সেই সূত্রে গত প্রায় তিন বছর এই খাতে এক টাকাও দেওয়া হয়নি রাজ্যকে। শুধু তাই নয় একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নানা ‘অছিলায়’ আটকে রেখেছে মোদী সরকার।


কেন্দ্রের এই সব অভিযোগ দ্রুত মিটিয়ে ফেললে আটকে রয়েছে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ। চলতি শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে তৃণমূল সাংসদেরা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সরব হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কথা মতো রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করলে পশ্চিমবঙ্গকে একশো দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা দেওয়া হবে বলে ফের কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জানান। কিন্তু রাজ্য সরকার তথ্য দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের সব রকম শর্ত পূরণ করার পরও আটকে রাখা হচ্ছে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ।
গত ২৫ জুলাই রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিবকে একটি চিঠি দেন ‘মনরেগা’র ডিরেক্টর অদিতি সিং। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রিপোর্ট অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ ও জিটিএ এলাকায় ৪৪টি ভুয়ো কাজের জন্য রাজ্যকে ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সরঞ্জাম (নন ওয়েজ) এবং মজুরি (ওয়েজ) বাবদ খরচ।
তবে রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য মেনে নেয়নি। কারণ, যেসব ক্ষেত্রে কেন্দ্র অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে, রাজ্যের তথ্যভান্ডার বা এমআইএস ডেটা অনুযায়ী সেখানে সরঞ্জাম ও মজুরি মিলিয়ে খরচ হয়েছিল সাড়ে চার কোটির সামান্য বেশি টাকা। এর মধ্যে সরঞ্জাম বাবদ খরচ হয়েছিল ২ কোটি ২০ লক্ষের কিছু বেশি টাকা। কেন্দ্রের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৫ কোটি ৩৭ লক্ষের মধ্যে ১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা পুনরুদ্ধার করে কেন্দ্রকে দিয়েছে রাজ্য। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্র যাতে নতুন করে কোনও অজুহাত সামনে আনতে না পারে, তার জন্য সম্প্রতি বিতর্কিত অংশের কাজের সরঞ্জাম বাবদ খরচের বাদবাকি অর্থও উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কোষাগারে। তবে মজুরি বাবদ খরচ হওয়া টাকা উদ্ধারের বিষয়টি কেন্দ্রের উপরই ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য। কারণ, এই কাজের সঙ্গে ১০ হাজারের বেশি জবকার্ড হোল্ডার যুক্ত ছিলেন। মূলত, ২০১৯ সালের আগে এই কাজগুলি হয়েছিল। এতদিনে সেই কর্মীদের অনেকে মারা গিয়েছেন। কারও ঠিকানা বদল হয়েছে। এই অবস্থায় মজুরির টাকা উদ্ধারের উপায় বাতলে দিতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে রাজ্য। সেই সঙ্গে পুরনো বকেয়া মিটিয়ে ২৭ নম্বর ধারা তুলে নেওয়ার আর্জিও ফের জানানো হয়েছে।