বাংলাই বাণিজ্যের সেরা ঠিকানা, তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রমাণ তৃণমূলের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিগত বেশি কিছু বছর যাবৎ শিল্পায়ন, বাণিজ্যকে পাখির চোখ করেছে রাজ্যের শাসক দল। আয়োজিত হচ্ছে বাণিজ্য সম্মেলন, আসছে লগ্নি প্রস্তাব। ভালো অংকের বিনিয়োগ এসেছে রাজ্যে। এবার তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরল রাজ্যের শাসক দল। সংসদে স ওয়াল-জবাব পর্বে কেন্দ্র দাবি করেছে, গত পাঁচ বছরে বাংলা থেকে ২২২৭টি সংস্থা তাদের দপ্তর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে। তারই পাল্টা পরিসংখ্যান তুলে ধরল তৃণমূল।
বাংলায় ১.৪৫ লক্ষ কোম্পানি ব্যবসা করে। যা সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে চতুর্থ। ২০২১ সালের স্কচ রিপোর্ট অনুযায়ী, শিল্প বান্ধব পরিস্থিতির নিরিখে দেশের শীর্ষে বাংলা। (Ease of Doing Business) রপ্তানিতে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে বাংলা। এক দশকে তৃণমূল আমলে তা ৫৫,০০০ কোটি থেকে ১.১ লক্ষ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। এক দশকে ৫৭ লক্ষ এমএসএমই সেক্টর তৈরি হয়েছে, এমএসএমই ক্লাস্টার সংখ্যা ৪৯ বেড়ে ৬৫৪ হয়েছে। ১.৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলায় হস্তশিল্পে ৫.৪ লক্ষ লোক নিযুক্ত আছেন যা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পাঁচ বছরে ৩,৪০০-র বেশি সার্ট-আপ তৈরি হয়েছে। যা প্রায় ত্রিশ হাজার লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। দেশের নয় বৃহদ সিমেন্ট কোম্পানি রয়েছে বাংলায়, যা বাংলাকে ‘ভারতের সিমেন্ট হাব’-এ পরিণত করেছে।
তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কার্যত বিপ্লব এসেছে বাংলা। হাজারের বেশি সফ্টওয়ার কোম্পানি রয়েছে রাজ্যে। উইপ্রো, কগনিজেন্ট, ইনফসিস, রিলায়েন্স জিও, এয়ারটেল, ভি-আই, আইটিসি, এল অ্যান্ড টি-র মতো সংস্থা বাংলায় বিনিয়োগ করে। প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ টিসিএসে কাজ করেন। সিলিকন ভ্যালি টেক হাব তৈরি হলে আরও কুড়ি হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০১১ সাল থেকে প্রায় ষাট হাজার কোটি টাকার লগ্নির বাস্তবায়ন ঘটেছে। আইটি কোম্পানিগুলোতে ২.৬ লক্ষ মানুষ চাকরি পেয়েছেন। ২২টি আইটি পার্ক তৈরি হয়েছে। রাজারহাট নিউটাউনে দু’শো একর জমিতে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি টেক হাব তৈরি হয়েছে। আমেরিকা সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস উৎপাদন-ক্ষেত্র তৈরি করতে চলেছে কলকাতায়। আইটিসি, (ছয় লক্ষ কোটির মার্কেট ক্যাপিটালের কোম্পানি) শ্রী সিমেন্ট, বার্জার পেন্টস, এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিস, আরপিজিএস গ্রুপ, আম্বুজা নেওটিয়া গ্ৰুপ, ইমামি লিমিটেড, টিটাগড় রেল সিস্টেম ও আরও অনেক কোম্পানি সফলভাবে বাংলায় ব্যবসা করছে।
বাংলার শিল্প-বাণিজ্য পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্র তথা বিজেপিকে খোঁচাও দিয়েছে তৃণমূল। মোদী আমলে শুধুমাত্র ২০২৩ সালে ২.১৬ লক্ষ ভারতীয় দেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। সে পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এক হাত নিয়েছে বাংলার শাসক দল।
শুক্রবার, রাজ্যসভায় ফের একবার বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন তৃণমূলের সাংসদ। ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ রাজ্যসভায় তুলে ধরলেন সাকেত গোখলে। এদিন তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্য সাকেত দলের নির্দেশ মতো জিরো আওয়ারে ১০০ দিনের কাজের টাকার প্রসঙ্গ তোলেন। পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের সুব্যবস্থার উন্নতির দাবি জানান তিনি। বিষাক্ত কর্মসংস্কৃতি, শ্রম আইন নিয়ন্ত্রণ-সহ আম জনতার প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যা, বঞ্চনার কথা উঠে আসে সাকেতের বক্তব্যে।
বেসরকারি কোম্পানিগুলির কর্মীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরব হন সাকেত। কেন্দ্রের কাছে বেসরকারি কর্মীদের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানান। তিনি রাজ্যসভায় বলেন, অত্যধিক কাজের চাপ ও মানসিক চাপের জেরে বেসরকারি কোম্পানির কর্মী আন্না সেবাস্তিয়ান পেরাইলের মৃত্যুর পর তাঁর মা অনিতা অগাস্টিনের চিঠি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। একইসঙ্গে তিনি জানান, কাজের চাপ কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। অনেক কর্মী বলছেন, বেশিরভাগ বেসরকারি কোম্পানি ও কনসালটেন্সিতে প্রচলিত নিয়ম হয়ে গিয়েছে এটি। কিন্তু এই প্রথা গ্রহণযোগ্য নয়। কম মজুরি বা বেতন, অতিরিক্ত সময় খাটানো বা কাজের সময় ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেওয়া, কর্মচারীদের উপর অমানুষিক ব্যবহার রোধে কঠোর ও শাস্তিমূলক আইন প্রণয়নের উপর দাবিতে সওয়াল করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশে বিষাক্ত কর্মসংস্কৃতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সমস্ত কর্মীদের যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন দিতে হবে। কাজের সময় নির্দিষ্ট করতে হবে সরকারকে। বেশি সময় কাউকে খাটানো চলবে না। সাকেত মহারাষ্ট্র সরকারকে চিঠি লিখে আন্না সেবাস্তিয়ানের কাজের চাপ নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন।
বিশিষ্ট শিল্পপতি নারায়ণ মূর্তি-সহ অনেকেই ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজের পক্ষে দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তৃণমূল চায়, এ অবস্থায় বদল আসুক। পরিবার প্রতিপালনের জন্য মানুষ কাজ করে, সেই পারিবারিক ও সামাজিক জীবন থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। কাজের চাপে মানসিক ব্যাধির মতো ভুগছেন সাধারণ কর্মীরা। পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়েও রাজ্যসভায় মুখ খোলেন তিনি। এতে গ্রামগঞ্জের লক্ষ লক্ষ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামীণ অর্থনীতি আঁধারে ডুবে যাচ্ছে।
পাশাপাশি, এদিন মহিলা উদ্যোক্তা এবং সবুজ গতিশীলতার বিষয়ে সুস্মিতা দেবের সম্পূরক প্রশ্নও ছিল বাঙলার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
👉মহিলাদের নেতৃত্বে MSME যে কোনো রাজ্যের মেরুদণ্ড গঠন করে
👉গত ১০ বছরে ৫৭ লক্ষ নতুন MSME বাংলা রাজ্যে ১.৩ কোটি চাকরি দিয়েছে
👉 জামানত রাখা মহিলাদের জন্য একটি সমস্যা