স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অপমানের বিরুদ্ধে সরব হতে ২৩ ডিসেম্বর সারা রাজ্যে মিছিল করবে তৃণমূল
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাবাসাহেব আম্বেদকরকে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে সমালোচনার ঝড়। বৃহস্পতিবার ক্রিসমাস কার্নিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এহেন মন্তব্যে তিনি ‘স্তম্ভিত’। আজ, শুক্রবার গোটা বাংলাজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমাজ মাধ্যমে তৃণমূল সুপ্রিমো লেখেন, “আমাদের সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকরের অপমান মানছি না, মানব না! এই জাতিবিদ্বেষী বিজেপি সরকারকে ধিক্কার। সংবিধান-বিরোধী বিজেপি বারংবার এই মহান দেশের গণতন্ত্রের উপর আঘাত হেনেই চলেছে। যত দিন যাচ্ছে, তত তাদের দলিত-বিরোধী মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের মর্যাদাকে লঙ্ঘন করেছেন এবং আমাদের সংবিধানের জনক, বাবাসাহেব ড. বি.আর. আম্বেদকর এবং সংবিধানের খসড়া কমিটির বাকি সকল বরণীয় এবং স্মরণীয় ব্যক্তিদের প্রতি বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।
এটি কেবলমাত্র বাবাসাহেবের অপমান নয়, এটি আমাদের সংবিধানের মেরুদণ্ডের উপর একটি আঘাত এবং আমাদের দলিত ও আদিবাসী ভাইবোনদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদে এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অপমানের বিরুদ্ধে সরব হতে, আগামী ২৩ ডিসেম্বর দুপুর ২টো থেকে ৩টে পর্যন্ত, রাজ্যের প্রতিটি ব্লক ও পুরসভাতে এবং কলকাতার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হবে।
আসুন, আমরা সকলে গণতন্ত্র রক্ষার্থে এই মিছিলে সামিল হই। এই ঘৃণ্য, স্বৈরাচারী বিজেপির সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাই, আসুন আমরা বাবাসাহেবের উত্তরাধিকার এবং আমাদের সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য একত্রিত হই।”
আগামী ২৩ ডিসেম্বর দুপুর ২টো থেকে ৩টে পর্যন্ত, বাংলার প্রতিটি ব্লক ও পুরসভাতে এবং কলকাতার প্রতিটি ওয়ার্ডে শাহের মন্তব্যের প্রতিবাদে মিছিল করবে তৃণমূল।
গত বুধবারই এক্স হ্যান্ডেলে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি লেখেন, “সংসদে যখন সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপন হচ্ছে তখন অমিত শাহ অপমানকজনক মন্তব্য করে আম্বেদকরের ভাবমূর্তি নষ্টের পথ বেছে নিলেন। সেটাও গণতন্ত্রের মন্দির সংসদে দাঁড়িয়ে। তাতেই ওদের বর্ণবিদ্বেষী, দলিত বিরোধী মানসিকতা স্পষ্ট বোঝা যায়। ২৪০ আসন পাওয়ার পরই ওরা এমন আচরণ করছে, ৪০০ আসনের স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলে হয়তো আম্বেদকরের সব অবদান ভুলে নতুন ইতিহাস লিখে দিত। অমিত শাহর এই মন্তব্য সেই লক্ষ লক্ষ মানুষকে আঘাত করছে যারা আম্বেদকরের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাঁর দেখানো পথে চলেন। কিন্তু যে দলটা বিভেদ এবং ঘৃণায় বিশ্বাস করে, সেই দলের থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায় না।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্ক চলাকালীন অমিত শাহ বলেন, “এখন এক ফ্যাশন হয়েছে- আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর। এতবার যদি ভগবানের নাম নিত তব সাতজন্ম স্বর্গবাস হয়ে যেত।” সঙ্গে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “১০০ বার ওর (বিআর আম্বেদকর) নাম নিলেও কিন্তু ওঁকে নিয়ে আপনাদের কী আবেগ ছিল? তফসিলি জাতি বা তফসিলি উপজাতিদের প্রতি সরকারের আচরণ নিয়ে খুশি ছিলেন না আম্বেদকর।”
শাহের মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধী শিবির। বৃহস্পতিবার সংসদের মকর দ্বারের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন শাহের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনেন।