শুধু লোকসঙ্গীতেই নয়, ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতেও অসামান্য দিশারী ছিলেন কালিকাপ্রসাদ
‘ও মোর বন্ধুধন রসিয়া, দেখা দ্যাও মোক একবার আসিয়া’
ভাওয়াইয়া এ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে কণ্ঠশিল্পী ও লোকসংগীত গবেষক কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের প্রতিষ্ঠা করা বাংলা গানের দল দোহারের মাধ্যমে। একসময়ের জনপ্রিয় লোকসংগীতগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ঠিক সেই সময় কালের গর্ভ থেকে সেগুলোকে বের করে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছিল কালিকাপ্রসাদের দোহার।
ঠিক তেমনই এই ভাওয়াইয়া গানটিও বের করে আনেন কালিকা প্রসাদ। এ গানে প্রিয়জনকে দেখার ও কাছে আনার ব্যাকুলতা অন্যরকম। ঠিক এখনও এমনই আকুলতা কাজ করে অসময়ে চলে যাওয়া কালিকাভক্তদের মাঝে। আজ কালিকাপ্রসাদের জন্মবার্ষিকী।
পারিবারিকভাবেই ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কালিকা প্রসাদ। তাঁর বাবা রামচন্দ্র ভট্টাচার্য ও কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য দুজনের কাছেই গানের তালিম নিয়েছিলেন তিনি। তবে বাবার ধ্রুপদী গান তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি ছুটে গেছেন কাকার লোকগানের দিকেই। কাকা অনন্ত ভট্টাচার্যের সংগ্রহে ছিল প্রায় আড়াই হাজার লোকসংগীত। সেখান থেকেই মূলত আকৃষ্ট হয়েছিলেন লোকগানের প্রতি।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান শুনে বড় হয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই মন ছুটত টুসু, ভাদু, ভাওয়াইয়া ও ঝুমুর গানে। ভাটিয়ালি গান শেখার জন্য মরমী শিল্পী শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে থেকেছেন কয়েক বছর। ভাটিয়ালি সুরের উজান বাওয়া গান শুনতে শুনতে একসময় মনে হলো জোট বাঁধা দরকার। তৈরি হলো দোহার। ১৯৯৯ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গের পল্লিগান ও লোকায়ত গানের ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণের জন্য লোকগানের ব্যান্ড দোহার প্রতিষ্ঠা করেন।
অসম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের চিলেটি, বিহু, বাউল, কামরূপী ও ভাওয়াইয়া গান তিনি দেশে-বিদেশে গেয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি ছায়াছবির গানেও তাঁর অবদান ছিল। শেষ ছায়াছবির কাজ ছিল বাংলাদশের ভুবনমাঝি (২০১৭)।
লোকগানকে বাণিজ্যের মোড়কে বাঁধেননি কখনও। তার গানে বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে লোকায়ত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। লোকসংগীতকে নতুন আঙ্গিকে মানুষের সামনে তুলে ধরার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনি ব্যস্ত থেকেছেন জীবনের অধিকাংশ সময়।