মোদী আমলে কর্পোরেট ঋণ মকুবের জেরে সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি খুইয়েছে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা?
চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত সরকার প্রত্যক্ষ কর বাবদ ১৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে। তার সমান অর্থই ব্যাঙ্কগুলি গত ১০ বছরে হারিয়েছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আম জনতার বদলে, মোদী ব্যবসায়ী আর কর্পোরেটদের জন্য আচ্ছে দিন এনেছেন, এমনই আক্রমণ শানান দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলেরা। এ অভিযোগ যে সত্যি তা প্রমাণ করল সাম্প্রতিক এক আরটিআই। রাঘববোয়ালদের ঋণ মকুবে কোনও খামতি নেই মোদী সরকারের। মোদী আমলে ঋণ মকুব করে সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকা খুইয়েছে। তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নের জবাবে এ’পরিসংখ্যান সামনে এনেছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
আরবিআই জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের হিসাব মুখে ফেলেছে দেশের ব্যাঙ্কগুলি। যার পোশাকি নাম ‘রাইট অফ’। এই বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের যৎসামান্য উদ্ধার করা গিয়েছে। মাত্র ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা অর্থাৎ মাত্র ১৬ শতাংশ! বাকি ১৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা উধাও।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মী প্রফুল্ল পি সারদার দায়ের করা আরটিআইয়ের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছে আরবিআই। গত দশ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি সবচেয়ে বেশি ঋণ রাইট অফ করেছে। মোট পরিমাণ প্রায় ১২ লক্ষ ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা ও আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলির ৬ হাজার ২০ কোটি টাকাও হিসেবের খাতা থেকে উধাও। মকুব করা এই টাকার বেশিরভাগই কর্পোরেট ঋণ। চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত সরকার প্রত্যক্ষ কর বাবদ ১৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে। তার সমান অর্থই ব্যাঙ্কগুলি গত ১০ বছরে হারিয়েছে। গত ১০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে খরচ হওয়া বাজেট বরাদ্দও ব্যাঙ্কগুলির মকুব করা অনাদায়ী ঋণের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
এই বিপুল পরিমাণ ঋণ ‘রাইট অফ’ করার কারণ কী? ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর শোধ না করায় ব্যাঙ্কের ঘাড়ে যে আর্থিক বোঝা চাপে, তাই এনপিএ অর্থাৎ ‘নন-পারফর্মিং অ্যাসেট’। এই অনুৎপাদক সম্পদ ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিটে কম দেখানোই ঋণ মকুবের কারণ। মোদী সরকারের বরাবরের দাবি, তাদের আমলে ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে এবং এনপিএ কমছে। সেটা আদপে ব্যাঙ্ককে রসাতলে পাঠিয়ে গোঁজামিল দিয়ে করা হচ্ছে।