সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু আজ থেকে
ছ’ মাস স্থগিত থাকার আজ থেকে ফের খুলছে সংসদ। শুরু হচ্ছে বাদল অধিবেশন। চলবে একটানা ১৮ দিন। যদিও সংক্রমণের ভয় এখনও কাটেনি। আগেই ২০ জন এমপি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। রবিবার লোকসভার পাঁচজন এমপির করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। লোকসভার সচিবালয়ের ১৩ জন কর্মীও আক্রান্ত। পাশাপাশি সোনিয়া গান্ধী, অমিত শাহ, রামবিলাস পাসোয়ানের মতো নেতা-মন্ত্রী অসুস্থতার কারণে কেউ গিয়েছেন বিদেশ, কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংক্রমণ এড়াতে আসবেন না ডঃ মনমোহন সিং, এ কে অ্যান্টনির মতো এমপিরাও। সংসদে রাখা হয়েছে গুচ্ছ বিধিনিষেধ। ফলে এবার সংসদের অধিবেশন অনেকটাই জৌলুসহীন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সংবিধান মোতাবেক ছ’ মাসের মধ্যে সংসদের অধিবেশন বসাতেই হয়। তারওপর এবারে রয়েছে ১১ টি অর্ডিন্যান্স, যা বিলে আকারে পাশ করানো বাধ্যতামূলক। তাই করোনা সংক্রমণের শঙ্কা নিয়েই শুরু হতে চলেছে সংসদের অধিবেশন। এভাবে একের পর এক এমপির করোনা আক্রান্তের খবরে চিন্তায় রয়েছে সরকার। তাই রবিবার তড়িঘড়ি সংসদে ডাকা হল নয়াদিল্লি এইমসের ডিরেক্টর ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়াকে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হল, অবস্থা কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে, কীভাবে এড়ানো যাবে সংক্রমণ?
এমপিদের তিনি বোঝালেন, আপাতত সাবধানতাই একমাত্র সংক্রমণ এড়ানোর ভ্যাকসিন। সর্বদা মাস্ক পরে থাকার পরামর্শের পাশাপাশি সময় অন্তর হাত স্যানিটাইজ আর পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখেই এমপিদের সংসদের অধিবেশনে হাজির হওয়ার প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন ডিআরডিও’র পক্ষ থেকে প্রত্যেক এমপিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ করোনা-কিট। যার মধ্যে রয়েছে বাড়িতে এবং সংসদে পরার পৃথক মাস্ক সহ দরজার হাতল খোলা, লিফটের বোতাম টেপার বিশেষ যন্ত্রও। ফলে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত করোনা মোকাবিলায় অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে আত্মপ্রচার করলেও, আজ থেকে সংসদের অধিবেশন নিয়ে ব্যাপক টেনশনে রয়েছে সরকার।
১৮ দিনে ১১টি অর্ডিন্যান্স সহ মোট ৪০টি বিল পাশ করানোর টার্গেট রেখেছে সরকার। তবে বেশ কয়েকটি বিলের ক্ষেত্রে সরকারকে বিরোধীদের চাপের মুখে পড়তে হবে। রবিবার বিএসি অর্থাৎ বিজনেস অ্যাডভাইসারি কমিটির বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে এবার অধিবেশনে বিরোধিতা ছেড়ে বিরোধীদের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করেছে সরকার। কিন্তু বিরোধীরাও জানিয়ে দিয়েছে, করোনাকে ঢাল করে সরকারকে যা ইচ্ছা তাই করতে দেব না। তাই ফের মঙ্গলবার বিএসির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বিরোধীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সরকারের ভাঁড়ারে পয়সা নেই বলে কোভিড মোকাবিলার নামে এমপি ল্যাডের টাকা খরচ দু’বছর সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার অর্ডিন্যান্স মেনে নেওয়া হবে না। আগামীকাল এই সংক্রান্ত বিলটি লোকসভায় আলোচনা শেষে পাশ করাবে বলে ঠিক করেছে সরকার। কিন্তু বিরোধীরাও বাধা দেবে বলেই ঠিক করেছে। লোকসভায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে বিলটি পাশ করিয়ে নিলেও রাজ্যসভায় বিপাকে পড়তে পারে। কৃষি সংক্রান্ত তিনটি অর্ডিন্যান্সেরও বিরোধিতা করবে কংগ্রেস।
বিএসি’র বৈঠকে উপস্থিত থেকে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, লাদাখে চীনের আগ্রাসন থেকে অর্থনীতির বেহাল দশা, পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিষয়েও আলোচনা করতে হবে। একইভাবে তৃণমূলের লোকসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটি ইস্যুতে রাজ্যকে বঞ্চনার ইস্যু তুলেছেন।