স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের মাশুল দিচ্ছে শৈশব, সল্টলেকের রাস্তায় দুই সন্তানকে ফেলে গেলেন মা

ফুটপাতে বসে ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে দু’টি শিশু! সম্পর্কে ভা‌ই-বোন। ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে দু’জনেই।

February 5, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ঘটনাস্থল রাজ্যের সমাজকল্যাণ দপ্তর, সল্টলেকের শৈশালী ভবনের সামনে। কাকভোর। তখনও শহরের ঘুম ভালো করে ভাঙেনি। ফুটপাতে বসে ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে দু’টি শিশু! সম্পর্কে ভা‌ই-বোন। ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে দু’জনেই। দু’গাল বেয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে চোখের জল। ‘কী হয়েছে তোমাদের?’ সন্দেহ হওয়ায় কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কয়েকজন। প্রথমে জবাব মেলেনি। পরে ভাই-বোন কাঁপা কাঁপা গলায় মৃদু স্বরে বলল, ‘রাতের বেলায় মা আমাদের বসিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে।’ আবার হাপুস কান্না।

বোঝা গেল, অপেক্ষা করতে করতে সকাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, তাদের মা আর ফেরেননি! ফুটপাতে বসেই সারারাত কেটেছে। ভয়, আতঙ্কে গুটিয়ে দু’জনেই। এহেন দৃশ্য দেখে চোখের জল আটকাতে পারেননি পথচারীরাও। স্থানীয় এক দোকানদার এগিয়ে এসে খাবারও দিলেন ভাই-বোনকে। কান্নায় গলা শুকিয়ে গিয়েছে। রুটি-তরকারির প্লেট পাশে নামিয়েই ফের কাঁদতে শুরু করল তারা।

মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়েই সেখানে হাজির হয় বিধাননগর উত্তর থানার পুলিস। ভাই-বোনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় তারা। মেয়েটির বয়স ১১ বছর, ভাইয়ের ৭ বছর। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হস্তক্ষেপে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে দু’জনকে। কিন্তু, তারা সল্টলেকে এল কীভাবে? উদ্ধারের পর তাদের পরিবারের খোঁজ শুরু করে পুলিস।

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ওই ভাই-বোনের আসল বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। বছর দেড়েক ধরে বাবা-মা একসঙ্গে থাকেন না। কার্যত ‘বিচ্ছেদ’। দুই সন্তানকে নিয়ে মা ভাড়া থাকতেন টালিগঞ্জে। আর্থিক ও পরিবারিক সমস্যার জেরে দুই সন্তানকে সমাজকল্যাণ দপ্তরের অধীন কটেজ হোমে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন তিনি। সোমবার সকালে সেজন্যই এসেছিলেন শৈশালী ভবনে। কিন্তু, ওইদিন ছিল ছুটি। তাও তিনজনে ওই ভবনের সামনে বসেছিলেন। পাশেই দীনেশ শীলের চায়ের দোকান। এদিন তিনি বলেন, ‘আমি ওদের মাকে বলেছিলাম। আজ ছুটি, বাড়ি ফিরে যান। অন্যদিন আসবেন। কিন্তু, রাত পর্যন্ত ওরা বসে থাকল। আমায় বলল, ফিরব না। আমি যখন দোকান বন্ধ করি, তখন দেখলাম, সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। আজ সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি, শিশু দু’টি ফুটপাতে বসে অঝোরে কাঁদছে। ওদের মা নেই। তিনি সন্তানদের রেখে চলে গিয়েছেন!’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen