সত্যজিৎ রায়ের প্রেমকাহিনী: বয়সে ছোট পিসতুতো ভাই’কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন বিজয়া

১৯২১ সালের ২রা মে, সত্যজিৎ রায় কলকাতায় তাঁর বাবা-মা সুকুমার রায় এবং সুপ্রভা রায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

April 23, 2025 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রয়াত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, সত্যজিৎ রায়ের প্রেমকাহিনী অস্কারজয়ী পরিচালকের বর্ণাঢ্য জীবনের সবচেয়ে অপ্রকাশিত অংশগুলির মধ্যে একটি। তাঁর স্ত্রী বিজয়া রায় ছিলেন আত্মীয়!

প্রয়াত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চিত্রনাট্যকার, সত্যজিৎ রায়কে প্রায়শই ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও, তিনি কেবল ভারতেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন, তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশল, ধারণা এবং চিন্তাভাবনামূলক পদ্ধতিগুলি প্রশংসিত হয়। সত্যজিৎ রায় তাঁর চলচ্চিত্র, পথের পাঁচালী (১৯৫৫), অপরাজিত (১৯৫৬), চারুলতা (১৯৬৪), দেবী (১৯৬০) এর জন্য বিখ্যাত এবং তালিকাটি আরও দীর্ঘ। ১৯৯২ সালে, সত্যজিৎ রায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্র এবং ধারণার মাধ্যমে বিশ্ব চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য সম্মানসূচক একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

১৯২১ সালের ২রা মে, সত্যজিৎ রায় কলকাতায় তাঁর বাবা-মা সুকুমার রায় এবং সুপ্রভা রায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সিনেমার প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং সর্বদা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। ৩৮ বছরের কর্মজীবনে, সত্যজিৎ অসংখ্য প্রভাবশালী চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার জয় থেকে শুরু করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত, সত্যজিৎ রায় সব সম্মানী পেয়েছিলেন।

যথার্থ অর্থেই মাণিকের অর্ধাঙ্গিনী ছিলেন মঙ্কু । সে পথের পাঁচালির শ্যুটিং টাকার অভাবে আটকে যাওয়ার পর গায়ের গয়না খুলে দেওয়াই হোক, আর কিশোর কুমারকে রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করে পাঠানোই হোক বা অপুর সংসারের জন্য শর্মিলা ঠাকুরকে স্বামীর মনের মতো অপর্ণায় পরিণত করাই হোক ।

নিজের থেকে বয়সে ছোট পিসতুতো ভাই মানিককে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন বিজয়া রায়।

বিজয়ার জন্ম অক্টোবর ১৯১৭ । বাবার নাম ছিল চারুচন্দ্র দাস । পটনার নামজাদা ব্যারিস্টার ছিলেন তিনি । মা মাধুরী দেবী ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর ছোট বোন। পটনার প্রসিদ্ধ ব্যারিস্টারের মেয়ে বিজয়া ছিলেন অসামান্যা রূপসী আর গুণবতী । তাঁর বাবা শুধু গান শেখাতেই মেয়েকে পাঠাতে চেয়েছিলেন প্যারিস ।

বিজয়ের বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে মুহূর্তে ভেঙেচুরে যায় সব স্বপ্ন । অসহায়, সম্বলহীন মাধুরী দেবী ছেলে-মেয়ে নিয়ে উঠে আসেন কলকাতায় শ্বশুরের ভিটেতে । কালক্রমে সেই সময় অকাল বিধবা হয়ে সুকুমার জায়া সুপ্রভা রায়ও বাপের বাড়িতে এসে ওঠেন একমাত্র ছেলে সত্যজিৎকে নিয়ে । সেখানেই আলাপ দু’জনের । সত্যজিৎ আর বিজয়া । ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক, ভালবাসা । একে অপরের মধ্যে পূর্ণতা খুঁজে পাওয়া । কিন্তু বিয়ে যে প্রায় অসম্ভব । তবু পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন তাঁরা । ১৯৪৮-এর ২০ অক্টোবর তৎকালীন বোম্বে-তে সকলকে লুকিয়ে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন সত্যজিৎ-বিজয়া । ১৯৪৯-এর ৩ মার্চ ফের কলকাতায় ব্রাহ্ম মতে বিয়ে হয় । সামাজিক প্রয়োজনেই রেজিস্ট্রি বিয়ের কথা গোপন করে রেখেছিলেন তাঁরা । বিজয়া রায় এ-প্রসঙ্গে তাঁর আত্মজীবনীতে পরিহাস করে লিখেছিলেন, ‘যেখানে একবার বিয়ে হওয়ারই কোনও সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে দু’বার হল।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen