হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

মোদীর আমলে কেমন আছে ভারতবর্ষের গণতন্ত্র?

September 16, 2020 | 2 min read

২০১৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। এরপর কেটে গেছে দেড় বছর। এই আঠারো মাসে বদলে গেছে ভারতের ছবি। একদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের আস্ফালন, অন্যদিকে অর্থনীতির আর্ত হাহাকার। এটাই কি ভারতের ভবিতব্য ছিল?

গত এক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ফ্যাসিবাদের ঝলক দেখতে পাচ্ছেন বিশিষ্টজনেরা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অবদমিত করে উগ্র জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে। সরকারের খামতিগুলি ঢেকে দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপনে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে।

মোদী নিজেকে জনগণের প্রধান সেবক বলেন। কিন্তু ওনার কাজে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ স্পষ্ট।

কাশ্মীর

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সংবিধানের ধারা ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বিলুপ্ত করা হয়। এই ধারাগুলির মাধ্যমে এতদিন জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ রাজ্যের সুবিধা পেত। কিন্তু হঠাৎই, কোনও আলোচনা ছাড়াই এই ধারা অবলুপ্ত করা হয়। রাজ্যের প্রতিবাদী নেতাদের গৃহবন্দী করা হয়। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং চালু করা হয় লকডাউন যা আজও চলছে। জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে মানবিক অধিকার হনন করা হয় ভূস্বর্গে।

সিএএ

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সংসদে পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। এর আগে অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির ভয়াবহতা দেখেছিল দেশ। এই দুইয়ে মিলে পরিণতি হতে পারে, সেই চিন্তায় সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। নাগরিকত্ব প্রমাণ না করতে পারলে তারা কোথায় যাবেন, এই ভয় তাড়া করে বেড়ায় সকলকে। ধর্মের নামে নাগরিক বিভাজনের বিরোধীতায় পথে নামে মানুষ। এরপরই সংগঠিত হয় এক নারকীয় দাঙ্গা। দেশের রাজধানী রক্তে লাল হয়ে ওঠে।

অর্থনীতি

২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা থাবা বসায় ভারতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে লকডাউন ঘোষণা করেন মোদী। বিপদে পড়েন ভিনরাজ্যে থাকা ১৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক। সরকারের ঔদাসীন্যের কারণে তারা পায়ে হেঁটে চলা শুরু করেন নিজেদের বাড়ির উদ্দেশে। গত পাঁচ মাসে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ২ কোটি মানুষ। জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ২৪%। রোজগারহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো দুরস্ত, কেন্দ্র অর্থনীতির এই বিপর্যয়কে বিধির বিধান বলে দায় সেরেছে।

করোনা মোকাবিলা

করোনা মোকাবিলাতেও মোদি সরকারের অকর্মণ্যতার জুড়ি মেলা ভার। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউন ঘোষণা করে দেশের মানুষকে বিপদে তো ফেলেছিল সরকার, এরপর থালা বাজানো, প্রদীপ জ্বালানোর মত মন ভোলানো কর্মসূচির মাধ্যমে অতিমারী মোকাবিলায় নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চেয়েছে সরকার। রাজ্যগুলিকে পর্যাপ্ত সাহায্য না করা, ত্রুটিপূর্ণ কিট পাঠানো থেকে শুরু করে বিরোধী রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্য না করা – ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে অসাফল্যের। আর করোনার নামে পিএম কেয়ার ফান্ডে টাকা তুলল যে সরকার, তারাই এখন সেই ফান্ডের হিসেব দিতে চাইছে না।

বিপন্ন গণতন্ত্র

অতিমারী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও বিজেপি অগণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধী রাজ্যগুলিতে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। রাজস্থানে ঘোড়া কেনা বেচা হোক বা মধ্যপ্রদেশে সরকার ফেলে দেওয়া – বিজেপির জুড়ি মেলা ভার। আর এই করোনা আবহে যখন রাজ্যগুলি স্বাস্থ্যে মনোনিবেশ করছে, সেখানে ধর্ণা, সমাবেশ করে অতিমারীর গাইডলাইন অমান্য করছে বিজেপি। পাশাপাশি, প্রতিবাদী বিদ্দ্বজনদের জাতীয় সুরক্ষা আইনে কেস দিয়ে জেলবন্দি করে রাখার চেষ্টাও করেছে গেরুয়া শিবির।

স্বভাবতই, প্রশ্ন ওঠে, মোদীর আমলে যা হচ্ছে তাতে গণতন্ত্রের ব্যাপ্তি ঠিক কতটা?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Democracy, #Fascism, #Narendra Modi

আরো দেখুন