সংসদের ডায়েরী – ১৫ই সেপ্টেম্বর
চলছে সংসদের বাদল অধিবেশন। ক্ষমতার অলিন্দ থেকে সব হাঁড়ির খবর পেতে চোখ রাখুন এখানে।
রাজ্যসভার সদস্য লোকসভায়
করোনার গেরোয় সংসদের বাদল অধিবেশনে প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পালা করে বসছে দুই সদন। লোকসভা সদস্যরা বসছেন রাজ্যসভায়, উল্টোটাও হচ্ছে। তাই, বক্তব্য রাখার সময় সদস্যদের পরিচয় দিতে হচ্ছে, বলতে হচ্ছে তারা কোথায় বসেছেন। ছত্তিশগড়ের সাংসদ ছায়া দেবী যেমন বললেন, “স্যার, আমি রাজ্যসভার সদস্য কিন্তু লোকসভা থেকে বেশি।” এরপরই হাসির রোল ওঠে।
যে থালায় খায়, সেই থালাই ফুটো করছে
চলচ্চিত্র জগৎকে বদনাম করার এক ঘৃণ্য চক্রান্ত চলছে। কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে দুর্নাম করছেন ইন্ডাস্ট্রিকে। রাজ্যসভায় এই ভাষাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জয়া বচ্চন। তার দাবি, এই ইন্ডাস্ট্রি কোটি কোটি মানুষকে জীবিকা প্রদান করে। তবুও অসদুদ্দেশ্যে সিনেমা শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে। এমনকি, এই শিল্পের সাথে যুক্ত এক ব্যক্তি লোকসভায় এই ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধেই বিষোদ্গার করেছেন। যে থালায় খায়, সেই থালাই ফুটো করছে, বললেন জয়া।
করোনাকালেও প্রতিবাদ
সংসদের অধিবেশন চলাকালীন সংসদীয় চত্বরে প্রতিবাদ, ধর্ণা দেখতে অভ্যস্ত দেশের মানুষ। কিন্তু বাদল অধিবেশনে বিধিনিষেধের কড়াকড়িতে প্রতিবাদ আদৌ কতটা হবে বোঝা যাচ্ছিল না। তবে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে, আর সাংসদরা বসেন ধর্নায়। আজ কৃষকদের জন্য গলা ফাটাতে দেখা গেল বামেদের। গতকাল নিটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন ডিএমকে সদস্যরা।
আদানির বিমানবন্দর
দেশের বিমানবন্দরগুলির বেসরকারিকরণ হচ্ছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এখন এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ আদানি। এই ভাষাতেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন কংগ্রেসের সাংসদ কে সি বেণুগোপাল। তিনি বলেন, আমি কেরলের মানুষ। রাজস্থান থেকে নির্বাচিত। দুই রাজ্যই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই বিমানবন্দর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, ক্ষোভ বেণুগোপালের।
ডেপুটি চেয়ারম্যান না স্পিকার?
ডেপুটি স্পিকার বলতেই অভ্যস্ত তিনি। রাজ্যসভার সদস্য হয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যান বলতে সড়গড় হননি এখনও। বাংলা থেকে নির্বাচিত সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী পঞ্চম ইনিংস শুরু করলেন এইভাবেই। বিমানবন্দর সংক্রান্ত বিল নিয়ে বলতে শুরু করে খানিকটা মজার ছলেই ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের সাথে খুনসুটি করলেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা, মাটি, মানুষকে ধন্যবাদ জানান, তাকে রাজ্যসভায় আসার সুযোগ দিয়ে।
সামাজিক নয় শারীরিক দূরত্ব
করোনার দৌলতে সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং বা ‘সামাজিক দূরত্ব’ কথাটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। দু’গজ বা এক ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নিদান সর্বক্ষণ দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব কথাটা ব্যবহার করতে নারাজ তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তার মতে, সামাজিক নয়, হওয়া উচিত শারীরিক দূরত্ব। করোনাকালে ওনার এই বক্তব্য অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
কেন্দ্রের দ্বিচারিতা
কেন্দ্রের দ্বিচারিতা নিয়ে সরব হলেন কংগ্রেস সাংসদ বিবেক তাংখা। বিমানবন্দর সংক্রান্ত একটি বিল নিয়ে আলোচনার সময় তিনি কঙ্গনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারে ফারাক কেন? গত বছর জনৈক স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান যখন এক সাংবাদিককে নিয়ে প্লেনের ভেতর একটি ভিডিও করেন, তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্র। কিন্তু, কঙ্গনাকে ঘিরে প্লেনের মধ্যে যে সার্কাস হল, সেই বেলা চুপ কেন সরকার?
ওয়াক আউট
লাদাখে চীনের আগ্রাসন নিয়ে রাজনাথ সিং লোকসভায় বিবৃতি দিতেই সরকারের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে নামল কংগ্রেস। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিবৃতির পর বলতে না দেওয়ায় ‘ওয়াক আউট’ করল তারা। সংসদ চত্বরে গান্ধীর মূর্তির সামনে চলল প্রতিবাদ। সশরীরে সংসদে হাজির না থাকলেও বিদেশ থেকে ট্যুইটে আক্রমণ শানালেন রাহুল গান্ধী। সরব হল তৃণমূলও। কেবল চীন ইস্যুই নয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও খবর সরকারের কাছে না থাকা নিয়েও সরব হয়েছে বিরোধীরা।
দেশের মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ ১০০ জন করোনা যোদ্ধা
করোনা যুদ্ধে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন প্রায় ১০০ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মী। হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দোপাধ্যায়ের লিখিত প্রশ্নের এরকমই জবাব দিহি করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
সাংসদ জানতে চেয়েছিলেন করোনার বিরূদ্ধে লড়তে গিয়ে কতজন পুলিশকর্মী এবং কোন সশস্ত্র বাহিনীর কতজন জওয়ান শহীদ হয়েছেন। প্রথম প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রের এই দফতর জানায় গত ১০ই সেপ্টেম্বর অবধি ১০০ জন শহীদ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সিআরপিএফ জওয়ান ই রয়েছেন ৩৫ জন।
যত দোষ সব সংবাদ মাধ্যমেরই
পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে এর আগে কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে লকডাউন চলাকালীন হাজার হাজার শ্রমিকের পায়ে হেটে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হওয়ার কারণ কেন্দ্রের কাছে জানতে চান তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মালা রায়।
জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই যাবতীয় দোষ চাপিয়ে দেন সংবাদ মাধ্যমের ওপর।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ” বিভিন্ন ফেক নিউজ দেখে আতঙ্কিত হয়েই মানুষ এভাবে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা শুরু করেন। যদিও সরকার খাদ্য, ওষুধ সহ অত্যাবশকীয় পণ্যের ব্যবস্থা করেছিল। “