লকডাউনের ক্লান্তি কাটাতে ঘুরে আসুন প্রকৃতির কোল থেকে
ভ্রমণপিপাসু বাঙালির দিনগুলোকেই করোনা আলুনি করে দিয়েছে। সিনেমা হল বন্ধ। করোনার জন্য ঘোরার প্ল্যানও অথৈ জলে। বদলে মাস্ক, স্যানিটাইজার, কন্টেইনমেন্ট জোন, হটস্পট শব্দগুলো সারাক্ষণ কান পচিয়ে দিচ্ছে। লাগাতার সাড়ে পাঁচমাস ঘরে আর কাহাতক বসে থাকা যায়।
নিয়মবিধির মধ্যে থেকে অনেকেই চাইছেন ছোট্ট ট্যুরে যদি কয়েকটা দিন প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে আসা যায়। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এমনই কয়েকটি হটস্পটের সন্ধান থাকলো।
মংপু
জীবনসায়াহ্নে এসে বেশ কিছুদিন শৈলশহর মংপুতে কাটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে তিনি তিনবার এখানে এসেছিলেন মনমোহন সেন এবং মৈত্রেয়ী দেবীর অতিথি হয়ে। স্বয়ং কবিগুরু যেখানে শান্তির আশ্রয় পেতেন, সেই স্থান কি সুন্দর না হয়ে পারে?
মূলত সিঙ্কোনা চাষ হয় এখানে। তবু এই মংপু নানারকমের অর্কিডের স্বর্গরাজ্য। এখান থেকে ১২ কিলোমিটার উজিয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে পড়লেই, সেই রাস্তা ধরে সোজা সিকিমে পৌঁছনো যায়। আর ৩২ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিংয়ের হাতছানি তো আছেই। এনজেপি থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে এই মংপু।
এখানে এলে যেমন সিঙ্কোনা কারখানা দেখা যায়, তেমনই আছে অর্কিড পার্ক ও সাহেবদের আমলের বাংলো। সব মিলিয়ে অল্প সময়ের জন্য ছুটি কাটানোর পক্ষে আদর্শ জায়গা মংপু। এখানকার সরিতা কুঞ্জ হোম স্টেতে থাকতে পারেন অতিথিরা।
রঙ্গারুন
সুদূর লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস যে চায়ের তারিফ করে এসেছে যুগ যুগ ধরে, সেই ঐতিহ্যের দার্জিলিং চায়ের অন্যতম ঘাঁটি রঙ্গারুন। এখন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে এমনভাবে দেখা যায়, যেন পাশের বাড়ির জানলা। প্রাচীনতম চা বাগানগুলির অন্যতম এখানকার চা বাগান।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাত হাজার ফুট উপরে থাকা শহরের অন্যতম আকর্ষণ ঘুম স্টেশন। বিশ্বের উচ্চতম রেল স্টেশন। এখান থেকে দার্জিলিং শহর খুবই কাছে। টাইগার হিলও নাগালেই। রঙ্গারুণে সূর্যোদয় দেখাও এক মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা। খালিং কটেজে থেকে অবসর কাটানোর জন্য বারবার ফিরে আসতে হয় এই পাহাড়ি এলাকায়।
তুকদা
এক সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উপনিবেশ ছিল শৈলশহর তুকদা। এখনও যেন সেই ইতিহাস জীবন্ত। এই ক্যান্টনমেন্টে এখনও পরাধীন দেশের গন্ধ পাওয়া যায় যেন। ৩৬টি বাংলো আছে এখানে, যা শতাব্দী প্রাচীন। আর আছে অর্কিড বাগান।
উত্তরবঙ্গে যত রকমের অর্কিড পাওয়া যায়, তার প্রায় সবক’টি প্রজাতি আছে এই বাগানে। শিলিগুড়ি শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে এই সুপ্রাচীন শহর। এখানে থাকার জন্য সাইহৃদয়ম হোম স্টে অন্যতম।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে দূরে বেড়াতে যেতে চান না অনেকেই। তাঁদের জন্য নাগালের মধ্যে বেড়ানোর জায়গাগুলিকে নতুন করে চেনাচ্ছে ইন্ডিয়া ট্যুরিজম। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের রিজিওনাল ডিরেক্টর (ইস্ট) সাগ্নিক চৌধুরীর কথায়, যাঁরা বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন, আমরা চাই এবার তাঁরা সাহস করে বেরিয়ে পড়ুন।