বাঙালি কি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলা বই থেকে?
আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালে ঢাকায় প্রাণ দিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে। যে ভাষার জন্য রক্ত ঝরল, সেই ভাষার প্রতি কি বাঙালির টান ক্রমশ কমে আসছে?
একটি ভাষার জনপ্রিয়তা বোঝার মাপদণ্ড কি হতে পারে? সাহিত্য? হ্যাঁ, সেই ভাষায় কত বই প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলির বিক্রি কেমন – এটা থেকে আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে মানুষ বাংলা সাহিত্যের প্রতি কতটা অনুরাগী। তাই, ভাষা দিবস উপলক্ষে আজ টিম দৃষ্টিভঙ্গি পৌঁছে গেছিলো কলেজ স্ট্রিটে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সাথে কথা বলে জেনে নিতে, তাদের মতে বাংলা প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রির হাল এখন কেমন।
‘দেজ’ পাবলিশিং এর কর্ণধার অপূর্ব দে র কথায় কয়েক বছর আগেও যে সিঁদুরে মেঘ দেখা গিয়েছিল তা অনেকটাই কেটেছে। বাঙালি আবার বইমুখো হয়েছে। ওনার মতে, “আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলা বইয়ের দিকে ফেরানো প্রয়োজন, তাঁরা কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন হয়েছে বাংলা বই থেকে। হয়তো ইংরেজী পড়ছেন কিন্তু বাংলা পড়ার প্রবণতাটা তাদের কাছে কমেছে। এইটা আমাদের কোনোভাবে এই জায়গাটা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
বই পড়ার প্রবণতা ফেরার পেছনে কারণ তবে কি? শুধুই বাংলা ভাষা প্রেম? ‘বৈভাষিক’ প্রকাশনার অদ্বয় চৌধুরীর কথায় উথে এল এক নতুন আঙ্গিক। “এখন বেশ কিছু অল্টারনেটিভ কাজ হচ্ছে, যেগুলো করার সাহস আমাদের মতো ছোট প্রকাশকরা একসময় দেখাতো না। সেই সাহসগুলো এখন দেখানো হচ্ছে, যার ফলে আমরা অন্যরকম কাজ করতে পারছি। “এমনকি উনি মানতেও রাজি নন যে বাংলা বই পড়ার প্রবণতা কমে গেছে”। আমি বলব ভালো পরিমাণ লোক বই পড়ছে, আমরা যেরকম রেসপন্স পচ্ছি তাতে কোনোভাবেই বলা যায় না বাংলা বইয়ের মার্কেট ডাউন হয়েছে,” বললেন অদ্বয়।
‘গাঙচিল’ এর অধীর বিশ্বাসের মত আবার অন্য। ‘গেল গেল’রব তোলার ঘোর বিরোধী তিনি। “হা-হুতাশ করে লাভ নেই। নিজেকে জানতে হবে তো কি করতে হবে, কি করতে হবে না। তাহলেই হবে। পড়ছে না তাহলে চলছে কি? পৃথিবী কি করে চলে? চন্দ্রবিন্দু চলছে তো। নতুন নতুন প্রকাশনা হচ্ছে কি করে? যে ভালো বই করবেন তাঁর বাজার চিরকালই থাকবে, যে পারবেন না তাঁকে বিক্রি করে দিতে হবে।”
ভবিষ্যতে যদি কলকাতার বই এর মার্কেট আরও বাড়াতে হয়, তবে কলকাতার বই পাঠাতে হবে ওপাড় বাংলায়। ‘সপ্তর্ষি’ প্রকাশনার সৌরভ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, বাংলাদেশে মেরে কেটে বড়জোর ২% লোক কলকাতার বই পড়েন। “বিরাট সংখ্যায় বাংলাদেশের লোক অপেক্ষায় আছেন আমাদের বইয়ের জন্য। কিন্তু আমরা পৌঁছতে পারিনা। পৌঁছতে না পারার কারণ কিন্তু ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ উভয়ই সমানভাবে দায়ী। একটা একুশের বই মেলা হয় সেখানে কলকাতার কোনও প্রকাশক বই দিতে পারে না।”
মানচিত্রের বেড়াজাল ভেঙে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে কি তবে এপাড় আর ওপাড় বাংলার হাত মেলানোর সময় এসেছে?