ভুয়ো EPIC অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভাবনায় আঘাত করেছে, মত তৃণমূল সাংসদের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভুয়ো এপিক কার্ড ইস্যু প্রকাশ্যে এনে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এই নিয়ে সুর চড়ান। তারপর ধাপে ধাপে দলের সাংসদেরা সরব হন, অভিযোগ করেন। নির্বাচন কমিশনে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের মতে, ভুয়ো এপিক কার্ডের ইস্যু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। ভোটদান প্রক্রিয়ার অখণ্ডতাই যখন আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে, তখন তা গণতন্ত্রের ভিত্তিতে আঘাত করে।
প্রথমদিকে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ছিল একই এপিক নম্বর মানেই ভুয়ো ভোটার নয়। তৃণমূলের বক্তব্য, বিষয়টা একই এপিক নম্বরের নয়। একই নম্বরের এপিক বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। যখন দুটি এপিকের নম্বর একই থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রকৃত ভোটার কে? একাধিক ভোটারের একই ভোটার আইডি থাকলে কীভাবে প্রকৃত এবং নকল ভোটারের মধ্যে পার্থক্য করা হবে? যেহেতু এপিক নম্বরটি ভোটারদের তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তাই ভুয়ো এপিক নম্বর প্রকৃত ভোটারদের ভোটদান থেকে বঞ্চিত করবে। অবিজেপি রাজ্যে ভোটারদের এপিক নম্বরে অন্যান্য রাজ্যের লোকদের এপিক নম্বর দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টত বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ার ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয় এই ঘটনা।
নির্বাচন কমিশন প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। তৃণমূলের তরফে লাগাতার চাপ দেওয়া হলে, তারা বাধ্য হয়ে স্বীকার করেছে যে ভুয়ো এপিক রয়েছে। তবে, তারা এখনও প্রকাশ করেনি দেশে কতগুলি ভুয়ো ভোটার কার্ড রয়েছে। নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, ৯০ দিনের মধ্যে তারা সমস্যার সমাধান করবে। এখানেই তৃণমূলের প্রশ্ন, তারা কীভাবে সমাধান করবে? যখন তারা সমস্যার পরিমাণও জানেই না! নির্বাচন কমিশন যদি বলে, ২০০০ সাল থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ না করা অবধি, কেন গত পঁচিশ বছর ধরে কিছুই করা হয়নি? নির্বাচন কমিশন কী আড়াল করছে, কাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে? সাকেতের মতে, ভুয়ো ভোটার একটি দুর্নীতি। কমিশনের উত্তর দেওয়া উচিত।
ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড সংযুক্ত করার বিষয়ে তৃণমূল সাংসদের মত, ক্লোন করা আধার কার্ড ব্যবহার করেই ভুয়া ভোটার নাথিভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI)-র কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছিল তৃণমূল, কিন্তু তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিজেই এই বিষয়টি নিয়ে UIDAI-র সিইও-র সাথে দেখা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিছু সন্দেহজনক নিশ্চয়ই রয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল বিষয়টি উত্থাপন করার পরে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
সাকেত আরও বলেন, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের কথা বিবেচনা করে, তৃণমূল বুঝতে পেরেছে ২০২৬ সালে বাংলার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে এই বিষয়গুলি উত্থাপন করা আবশ্যক। তবে এই বিষয়টি কেবল বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভুয়ো ভোটারদের অস্তিত্ব সারা ভারতজুড়েই রয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, তা যে রাজ্যেই হোক না কেন!
বিরোধী দলগুলির চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো সমস্যাগুলির সমাধান এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন করতে পারেনি। মহারাষ্ট্র এবং দিল্লি নির্বাচনের পর, ভোটার অনিয়মের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ভুয়ো এপিকের বিষয়টি স্বীকার করার পরেও, নির্বাচন কমিশন এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি যে কতগুলি ভুয়ো কার্ড রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে যদি আস্থা অর্জন করতে হয়, তবে কমিশনকে প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার বদলে সক্রিয় হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। পুরো বিরোধী দলই ভুয়ো ভোটার আইডি এবং নির্বাচনী কারচুপি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিজেপি ছাড়া বাকি সব দলই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিজেপিও নির্বাচনে লড়াই করে, তারা কেন চুপ? এর একমাত্র কারণ হতে পারে বিজেপি নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে হয়ত এই কারচুপি করছে।