রাজনীতি থেকে বনবাস নাকি আবার কামব্যাক দিলীপ ঘোষের?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গ: প্রথমে বিয়ে তারপর সঙ্ঘ ত্যাগ – দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ, স্ত্রী রিঙ্কুর প্রথম পক্ষের পুত্রের মৃত্যু। বিগত এক মাস ধরে সব খবরের কেন্দ্রবিন্দুতে দিলীপ ঘোষ। কিন্তু তিনি কি আস্তে আস্তে বনপ্রস্থের পথে হাঁটছেন, নির্বাচিত হচ্ছেন রাজনৈতিক জগৎ থেকে? আস্তে আস্তে দলে (বিজেপিতে) কি কোণঠাসা হচ্ছেন? উঠছে সেই প্রশ্নও।
তার একের পর এক পদক্ষেপে বঙ্গ বিজেপি কার্যত নাস্তানাবুদ। দলের একটি অংশ তো তার ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দলের অন্দরে বিতর্কের রেশ এখনও চলছে। আগামী দিনে মেদিনীপুরের প্রাক্তন এই সাংসদকে নিয়ে দোল কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তাও স্পষ্ট নয় নেতা কর্মীদের কাছে। সম্প্রতি বিজেপির তিরঙ্গা যাত্রায় তাকে ডাকা হয়নি, তবে তিনি নিজেই অংশ নিয়েছিলেন মেদিনীপুরের মিছিলে।
আগামী ২৯ মে আলিপুরদুয়ারে মোদির আসার আগে কোর কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা, যার অন্যতম সদস্য দিলীপ ঘোষ। কিন্তু এবার কোর কমিটির বৈঠক কবে হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কমিটির এক সদস্যর কথায়, ‘দিলীপ ঘোষকে নিয়ে পার্টি স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তাই কোর কমিটির বৈঠক ডাকলে সদস্য হিসেবে ওঁকে আমন্ত্রণ জানাতেই হবে। তাতে নতুন করে বিতর্ক বাড়বে।’
আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে বিজেপির তৎকালীন সেনাপতি এবং বিজেপিকে “বিজেপি” বানানোর অন্যতম কারিগর লালকৃষ্ণ আদভানি পাকিস্তানের করাচিতে পৌঁছে মহম্মদ আলী জিন্নাহর সমাধিস্থলে সেল্যুট করেন, এবং সেই দেশের স্রষ্টাকে “হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক”, এবং “ধর্মনিরপেক্ষ” বলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, এই একটি ঘটনা এবং সামান্য কিছু বক্তব্যের পর থেকে আদভানির রাজনৈতিক গ্রাফ পড়তে শুরু করে। আদভানি বিজেপিকে লোকসভায় প্রথমে ২ থেকে বাড়িয়ে ৮৬, তারপর ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ১৮৬ করেন।
দিলীপ ঘোষের অবদানও বঙ্গ বিজেপিতে সেরকমই। সাংসদ সংখ্যা ২ থেকে বাড়িয়ে ১৮, বিধায়ক ৩ থেকে ৭৭। অতঃপর সভাপতিত্ব শেষ এবং দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়া। ২০২৪-এ পরাজয়, যাকে দলেরই বিশ্বাসঘাতকতা বলেন তিনি। সমাপতন এমনই, যে দুবারই এক একটি সৈকত শহর। প্রথমটি পাকিস্তানের করাচি। দ্বিতীয়, পশ্চিমবঙ্গের দীঘা। দীঘায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেন দিলীপবাবু। বলেন, “ঈশ্বর আপনাকে দিয়ে একটা বড় কাজ করিয়ে নিয়েছেন।”
পার্থক্য এখানেই যে আদবানির জিন্নাহ-স্তুতি প্রভাব ফেলেছিল জনমানসে। কিন্তু দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে বিজেপির অন্দরে। তবে এতকিছুর পরও বিজেপি ছাড়তে নারাজ “বাঘের বাচ্চা”। রাজনৈতিক ‘কামবব্যাকের’ জায়গা এখনও রয়েছে দিলীপ ঘোষের বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।