UNESCO-র নজরে লখনৌ ও হায়দ্রাবাদ সুস্বাদু খাবারের শহর হতে পারলে, কলকাতা কেন নয়?

বিশ্বের সেরা ডেজার্টের তালিকায় কলকাতার রসগোল্লা ও সন্দেশ বার বার জায়গা করে নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বাংলা তথা কলকাতা হল মিষ্টির স্বর্গরাজ্য।

June 14, 2025 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi
প্রায় দুই শতকজুড়ে টেরিটি বাজারের চীনা সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি ‘কলকাতা চাইনিজ’ খাবার শহরবাসীকে মুগ্ধ করে রেখেছে (সৌজন্যে: ranapaul_crypto/Instagram)

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:০০ : কাবাব, প্যাড়া আর আওয়ধি খানার স্বর্গরাজ্য নবাবের শহর লখনউ। ইউনেস্কোর সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমির (UNESCO Creative City of Gastronomy) তালিকায় গোটা বিশ্বের ৫৬টি শহর রয়েছে। তালিকায় ভারতের প্রতিনিধি মোটে একটি, বিরিয়ানির শহর হায়দ্রাবাদ (Hyderabad)। এবার তালিকায় ঢোকার দৌড়ে রয়েছে লখনউ (Lucknow)। তাদের আবেদন গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলেই লখনৌয়ের পরোটা-কাবাবও ঠাঁই পাবে সেরাদের তালিকায়। লখনৌ₹ ও হায়দরাবাদ সুস্বাদু খাবারের শহর হতে পারলে, কলকাতা (Kolkata) কেন নয়?

উল্লেখ্য, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ইউনেস্কো ক্রিয়েটিভ সিটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু করে ২০০৫ সালে। পৃথিবীর বিভিন্ন শহরকে সংস্কৃতি, সাহিত্য, লোকশিল্প, খাবার ঐতিহ্যের ভিত্তিতে বিশেষ বলে বেছে নেওয়া হয়। যার জন্য ইউনেস্কো নির্ধারিত আটটি মাপকাঠিতে মূল্যায়ণ করা হয়।

মূল ভিত্তি হল ঐতিহ্য। খতিয়ে দেখা হয় শহরটির ঐতিহ্যবাহী খাবার কী কী, শহরটির সংস্কৃতির সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো, ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁর রন্ধনপ্রণালীতে আদি অকৃত্রিম রীতি মেনে চলা হয় কি-না, খাওয়াদাওয়ার পুরনো রীতি রেওয়াজ আজও কতটা টিকে রয়েছে। কলকাতা কার্যত এসবের ডিপো। ঐতিহ্যকে আঁকড়ে বেঁচে আছে মহানগরী।

কলকাতার মিষ্টি

বিশ্বের সেরা ডেজার্টের তালিকায় কলকাতার রসগোল্লা ও সন্দেশ বার বার জায়গা করে নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বাংলা তথা কলকাতা হল মিষ্টির স্বর্গরাজ্য। বাংলার ছানার মিষ্টি, লাল মিষ্টি দই আর নতুন গুড়ের মিষ্টি যেকোনও প্রদেশের মিষ্টিকে বলে বলে গোল দেবে।

কলকাতা চাইনিজ

আঠারো শতকে কলকাতায় পা পড়েছিল চীনেদের (Chinese)। ইছাপুর, মির্জাপুর হয়ে ট্যাংরা-চায়না টাউন, শহরে চীনেরা জাঁকিয়ে বসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের খাবার ছড়িয়ে পড়েছিল মহানগরে। কলকাতার চাইনিজ, স্বাদে, গন্ধে, উপকরণে এবং রন্ধনপ্রনালীতে সম্পূর্ণ আলাদা। অনেকটা চীনের ক্যান্টনিজ প্রদেশের ধাঁচে। ট্যাংরা এবং টেরিটি বাজারে আজও কলকাতাবাসী চীনা সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি কলকাতা চাইনিজ পাওয়া যায়। প্রায় দুই শতকজুড়ে তার জনপ্রিয়তা অটুট।

কলকাতা বিরিয়ানি

মশলার অধিক্যহীন, নরম মাংস, হালকা চালের আলু দেওয়া বিরিয়ানির (biryani) মহিমা একমাত্র কলকাতা বিরিয়ানির প্রেমিকেরাই জানেন। বিরিয়ানির এই ঘরানার জন্ম খাস কলকাতায়। কলকাতা বিরিয়ানি নিজের আদিপুরুষ লখনউ বিরিয়ানিকে টক্কর দেয়। দেশে এবং বিদেশেও খাস কলকাতার আলু দেওয়া বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী।

চেলো কাবাব

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের এক বিখ্যাত রেস্তোরাঁ চেলো কাবাবকে (chelo kebab) আপন করে নিয়েছে। ইরানী খানাটির কলকাত্তাইয়া সংস্করণ খাদ্যপ্রেমীদের মত জয় করেছে। মাখন দেওয়া গরম ভাত, সানি সাইড আপ পোচড এগ, দু’রকমের কাবাব, ঝলসানো টম্যাটো, পেঁয়াজ, লেবু সহ পরিবেশিত হয়।

কষা মাংস

কালো কুচকুচে মশলাদার কষা মটন (mutton) , তেঁতুলের চাটনি, পরোটা আর পেঁয়াজ! মারাত্মক এক কম্বো যুগ যুগ ধরে কলকাতার রসনাতৃপ্তি ঘটাচ্ছে। গোলবাড়ির কষা মাংস আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

কাঠি রোল

নিজামে এর জন্ম তিনের দশকে। তখন নিজামে কাবাব খেতে আসতেন ব্রিটিশ সৈন্যরা। হাতে ধরে কাবাব খাওয়ায় তাদের আপত্তি ছিল ঘোরতর। পরোটায় মুড়ে কাবাব দেওয়া আরম্ভ হয়। নাম হয় কাঠি রোল (hot kati roll)। কাবাবের টুকরো বাঁশের কাঠিতে গেঁথে ঝলসানো হত, তাই কাঠি নামের সৃষ্টি। শতবর্ষ ছুঁই ছুঁই এই রোল আজও কলকাতার সুখাদ্যের অন্যতম সূচক।

মোগলাই

অনাদি কেবিন, বসন্ত কেবিনের মতো শতাব্দী প্রাচীন রেস্তোরাঁগুলো আজও বাঁচিয়ে রেখেছে শহরের মোগলাই পরোটার (Mughlai paratha) ঐতিহ্যকে।

ঝালমুড়ি-ফুচকা-চপ-কচুরি

খাস লন্ডনেও ‘কলকাতার ঝালমুড়ি’ ব্যানার লাগিয়ে ঝালমুড়ি বেচেন এক সাহেব। ফলে ঝালমুড়ির জনপ্রিয়তা কী স্তরে বলা বাহুল্য।

শহরের স্ট্রিট ফুডের রাজা হল ফুচকা। গোলগাপ্পা, পানিপুরিকে টেক্কা দিয়ে ফুচকার স্বাদ একেবারে আলাদা। ভাজা মশলা, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাখা আলু আর টক-ঝাল তেঁতুলের জল ফুচকার মূল ইউএসপি।

এছাড়াও শহরের অলিগলিতে আছে চপ, কাটলেট, কচুরির দোকান। হরিদাস মোদক, অ্যালেন্স কিচেন, নিরঞ্জন আগার, লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ, কালিকা কলকাতার ভাজাভুজির রাজ্যপাট সামলায়।

চা-কফি-শরবত

তৃপ্তির চুমুকের জন্য শহরের মোড়ে মোড়ে রয়েছে চায়ের (tea) ঠেক, চিত্তবাবুর কেবিন থেকে বলবন্ত সিংয়ের ধাবা! কফির জন্য আছে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস (College Street Coffee House)। ঐতিহ্যের আড্ডাপীঠে বসে কফিতে (coffee) চুমুক দেওয়ার সুবন্দোবস্ত আছে। গলা ভেজাতে হলে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন প্যারামাউন্ট। ডাবের শরবত, ম্যাঙ্গো ম্যানিয়া আর ট্যামারিন্ড, গলা ভেজানোর একাধিক উপাদান রয়েছে।

কলকাতা শহরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল শহরবাসীর খাবারপ্রেমী, ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার। এ শহরের ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁগুলো। এমন একটি শহরকে সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমির তালিকায় না-রাখার অর্থ, সে তালিকা অপূর্ণ থেকে যাওয়া! ক্যালকেশিয়নরা কি শহরের জন্য গলা ফাটাবেন? খাদ্যরসিক বাঙালিরা কি দাবি তুলবেন তালিকায় অন্তর্ভুক্তির?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen