প্রভাবশালীর তালিকায় শাহিনবাগের দাদি, মোদী, সমীক্ষা ‘টাইম’-এর
মোদী আছেন। দাদিও।
২০২০ সালের ‘প্রভাবশালী একশো’র তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন পত্রিকা ‘টাইম’। সেখানে প্রত্যাশা মতোই রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু একই সঙ্গে তালিকায় ঢুকে পড়েছেন শাহিনবাগ আন্দোলনের অন্যতম মুখ, ৮২ বছরের বিলকিস। টাইমের ‘আইকন’ বিভাগে রয়েছে তাঁর নাম।
গত বছর ডিসেম্বর থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিল্লির শাহিন বাগে আন্দোলনে বসেছিলেন হাজার হাজার মানুয। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অশীতিপর বিলকিসও। প্রতিদিন সকাল আটটায় গিয়ে বসতেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে, থাকতেন মাঝরাত পর্যন্ত। হয়ে ওঠেন সকলের ‘দাদি’, আন্দোলনকারীদের, দেশ-বিদেশ থেকে শাহিন বাগে আসা সাংবাদিকদেরও।
তেমনই এক সাংবাদিক মার্কিন পত্রিকাটিতে লিখেছেন বিলকিস সম্পর্কে। সেই সাংবাদিকের কথায়, ‘‘প্রথম যে দিন বিলকিসকে দেখি, কমবয়সিদের ভিড়ে বসেছিলেন তিনি। এক হাতে জপের মালা, অন্য হাতে জাতীয় পতাকা। দেশের প্রান্তিক মানুষের প্রতিবাদী স্বরের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।’’ এই সাংবাদিককে বিলকিস বলেছিলেন, ‘‘যত ক্ষণ আমার ধমনী দিয়ে রক্ত চলাচল করবে, এখানে বসে থাকব আমি। যাতে এই দেশের সন্তানেরা ন্যায় ও সাম্যের হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারে।’’
বিলকিসের প্রতিবাদ যাঁর সরকারের আনা আইনের বিরুদ্ধে, সেই নরেন্দ্র মোদীও রয়েছেন ‘টাইম’-এর তালিকায়— ‘লিডার’ বিভাগে। সঙ্গী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জ়াইর বোলসোনারোর মতো রাষ্ট্রনেতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রভাবশালী’ তকমা দিয়ে এই পত্রিকায় মোদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘যদিও ভারতের প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই দেশের আশি শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর এক জন, একমাত্র নরেন্দ্র মোদীই এমন ভাবে সরকার চালান যা দেখে মনে হয়, দেশের বাকি মানুষের কোনও অস্তিত্বই নেই। অতিমারি-পরিস্থিতিকে বিরোধী-স্বর চাপা দেওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। এবং পৃথিবীর সব থেকে বর্ণিল গণতন্ত্র ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।’’ প্রসঙ্গত, ১০১ দিন ধরে চলা শাহিন বাগ আন্দোলন ২৪ মার্চ তুলে দেয় অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ, করোনা সংক্রমণ রোখার কারণ দর্শিয়ে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে চতুর্থ বার মোদী জায়গা করে নিলেন ‘প্রভাবশালী’র তালিকায়। এর আগে তাঁকে ২০১৭-র তালিকায় রাখা হয়েছিল। তবে একমাত্র প্রথম বার ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিশেষ ইতিবাচক কথা কখনওই বলতে শোনা যায়নি ‘টাইম’কে। মোদী ও বিলকিস ছাড়া ‘প্রভাবশালী একশো’র তালিকায় রয়েছেন মাত্র আর এক জন ভারতীয়ই। তিনি অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানা। এ ছাড়া রয়েছেন তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত— গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং চিকিৎসক-গবেষক রবীন্দ্র গুপ্ত। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির গবেষকের দেখানো পথেই চলছে বর্তমান এইচআইভি চিকিৎসা।