ভোটার তালিকায় নাম তোলার নতুন নিয়ম নিয়ে তীব্র আপত্তি মমতার, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তুললেন প্রশ্ন
১৯৮৭ সালে ১ জুলাইয়ের পরে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজের পরিচয়ের প্রমাণ্য নথির সঙ্গে বাবা-মায়েরও নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:১৪: ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা আনতে সংশোধনের কাজ করছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই কারণে বিভিন্ন রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে একটি ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’। যার বেশ কিছু নিয়মাবলি নিয়ে আপত্তি তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কমিশন জানিয়েছে, নাগরিকত্বের সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ছাড়া ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে না। এ ছাড়াও ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল না, তাঁদের জন্মস্থানের প্রমাণ্যনথি জমা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সকলকে ভারতীয় নাগরিকত্বের ‘সেলফ অ্যাটেস্টেট ডিক্লেরশন’ জমা দিতে হবে বলেও জানায় কমিশন। পাশাপাশি, কমিশন নির্দেশ অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই সব ভোটারদের জন্মতারিখ এবং জন্মস্থানের প্রমাণ্যনথি দাখিল করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ভোটারেরা জন্ম শংসাপত্র, পাসপোর্টের মতো নথি প্রমাণ হিসাবে জমা দিতে পারবেন। ১৯৮৭ সালে ১ জুলাইয়ের পরে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজের পরিচয়ের প্রমাণ্য নথির সঙ্গে বাবা-মায়েরও নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের পরে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।

কমিশনের এই নিয়ম নিয়ে আপত্তি তুললেন মমতা। তাঁর দাবি, বিহারের নাম করে কমিশন বাংলাকে নিশানা করতে চাইছে। কারণ বিহারে সরকারে বিজেপি। সেখানে কিছু করবে না। ওরা আসলে বাংলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করছে। বিজেপি যা বলছে, কমিশন তাই করছে। ওরা আসলে ভয় পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা না বলে নির্বাচন কমিশন কখনই এটা করতে পারে না। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দল বা নির্বাচিত সরকার কখনই ক্রীতদাস নয়।’’ নাম না করে কমিশনকে বিজেপির প্রচারক বলেও কটাক্ষ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এই মুহূর্তে রথযাত্রা উপলক্ষে দীঘায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখান থেকেই জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের নয়া ডিক্লারেশন ফর্ম নিয়ে আপত্তি জানালেন। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন তাঁকে ২টি চিঠি পাঠিয়েছে। তা প্রাথমিকভাবে দেখতে গিয়ে ১৮ ও ১৯ পাতার নির্দেশিকায় তাঁর চোখে পড়েছে যে ওই ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণের সময় বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেটও দিতে হবে। তা কোথা থেকে পাবেন সবাই? এই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে নিজের কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ”আমিও নিজের মা-বাবার জন্মসাল জানি না।”
দলীয় বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য চেয়ে কমিশনের চিঠি নিয়েও আপত্তি তোলেন মমতা। তৃণমূলের সর্বময়নেত্রী প্রশ্ন, ‘‘কেন আমি আমার দলের বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য দেব? আমি কেন তাঁর গোপনীয়তা জানাব?’’ একই সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করেছেন এক জোট হয়ে এই বিষয়ে আপত্তি জানাতে।