নেতাজিই অমলাকে পাঠান উদয়শঙ্করের সাথে
১৯৩০ সালে ১১ বছর বয়সী অমলা নন্দী অধুনা বাংলাদেশের যশোর থেকে প্যারিসের উদ্দেশে রওনা দেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবার সঙ্গে। উপলক্ষ – আন্তর্জাতিক ঔপনিবেশিক প্রদর্শনীতে ভারতীয় কারূকর্মের প্রতিনিধিত্ব। আমন্ত্রণ ছিল নন্দীবাবুরই, কিন্তু ছোট্ট মেয়েও সঙ্গী হল বাবার। প্যারিসেই তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয় শঙ্কর পরিবারের।
বছর ত্রিশের উদয়শঙ্কর ততদিনে নৃত্যদুনিয়ায় পরিচিত নাম। মুম্বইয়ের ‘জে জে স্কুল অব আর্টে’ পড়া শেষ করে ‘রয়্যাল কলেজ অব আর্টে’ চিত্রকলা নিয়ে পড়ার জন্য ততদিনে লণ্ডন পাড়ি দিয়েছেন উদয়শঙ্কর। সেখানেই ‘রাধাকৃষ্ণ’ এবং ‘একটি হিন্দু বিবাহ’ নামের দুটি ব্যালাডের নির্দেশনা দেন উদয়শঙ্কর।
এরকমই একটা অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী আনা পাভলভার নজরে পড়েন উদয়শঙ্কর। এরপর লণ্ডন ও প্যারিসে আনার সঙ্গে উদয়শঙ্করের নৃত্যাভিনয় মুগ্ধ করে পশ্চিমী দুনিয়াকে। এবার ফিরে আসা যাক ১৯৩০ সালের প্যারিসে। সেবার তিন ভাই (রবিশঙ্করও ছিলেন) এবং মা হেমাঙ্গিনী দেবীকে নিয়ে ফ্রান্সে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন উদয়শঙ্কর।
অমলাকে দেখেই পছন্দ হয় হেমাঙ্গিনী দেবীর। তিনি ছোট্ট অমলাকে নিজের শাড়ি পরিয়ে দিতেন। সে সময় রবিশঙ্করের সঙ্গেই খেলতেন অমলা। রবিশঙ্কর আবার তখন দাদা উদয়শঙ্করের দলের সঙ্গে নাচতেনও।
প্যারিসেই অমলাকে নাচের কয়েকটি মুদ্রা চেষ্টা করে দেখতে বলেন উদয়শঙ্কর। কথাতেই কাজ! উদয় ঠিক যেমনটা বলেছিলেন, ছোট্ট অমলা হুবহু তা করে দেখান। অমলার সেই নাচ দেখে মুগ্ধ হন উদয় এবং তাঁর মা হেমাঙ্গিনী দেবীকে তিনি বলেন অমলার বাবাকে অনুরোধ করতে যাতে তিনি ২ মাসের জন্য ইউরোপে মেয়েকে নাচের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেন।
সে বছরই রবীন্দ্রনাথ উদয়শঙ্করকে বলেন এবার যেন তিনি নৃত্য চর্চার একটি কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এরপর ১৯৩৮ সালে স্বয়ং উদয়ের হাতেই ‘উদয়শঙ্কর সেন্টার ফর ডান্সে’র জন্ম হয়। এদিকে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আবার ছিলেন যশোরের নন্দীদের বিশেষ পরিবারিক বন্ধু।
নেতাজিই অমলার বাবাকে বলেন, মেয়েকে যেন তিনি উদয়শঙ্করের নৃত্যচর্চা কেন্দ্রে পাঠায়। আর নেতাজির কথা কি আর ফেলা যায়! আমলা আসেন সেন্টারে। তারপরেই মেলে অনুমতি।