২৬-এর আগে ‘বাঙালি বিরোধী’ তকমা ঘোচাতেই কি অসীম ঘোষকে Haryana-র রাজ্যপাল হিসেবে মনোনয়ন?
বিজেপিকে “বাঙালি বিরোধী” ‘ইমেজ’ পাল্টাতে হরিয়ানার রাজ্যপাল পদে একজন বঙ্গ বিজেপি নেতার মনোনয়ন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯.৪৩: বঙ্গ থেকে হরিয়ানার রাজ্যপাল! দীর্ঘদিন পরে ফের আলোচনায় অধ্যাপক অসীম কুমার ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি এবার দায়িত্ব নিতে চলেছেন হরিয়ানার রাজ্যপাল হিসেবে। সোমবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ঘোষণা করেছেন, হরিয়ানার নতুন রাজ্যপাল হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ঘোষ।
অসীম ঘোষ হলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত চতুর্থ রাজনীতিক যিনি ভারতের কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত হলেন। এর আগে এই তালিকায় ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় (পাঞ্জাব), বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী (উত্তরপ্রদেশ), ও তথাগত রায় (ত্রিপুরা ও মেঘালয়)।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার স্বীকৃতি হিসেবেই এই সম্মানজনক দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক অসীম কুমার ঘোষের হাতে। খুব শিগগিরই তিনি চণ্ডীগড় পৌঁছে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
কী তাঁর রাজনৈতিক ও পেশাগত পটভূমি?
হাওড়ায় ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন অসীম কুমার ঘোষ। পড়াশোনা করেন বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন, বিদ্যাসাগর কলেজ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতকোত্তর)। ১৯৬৬ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
রাজনীতিতে যোগ দেন ১৯৯১ সালে। ধাপে ধাপে দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান—১৯৯৬ সালে রাজ্য সম্পাদক, ১৯৯৮ সালে সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০২ পর্যন্ত রাজ্য সভাপতি ছিলেন তিনি। পরে ছিলেন ত্রিপুরার পর্যবেক্ষক ও বিজেপির রাষ্ট্রীয় কর্মসমিতির সদস্য। রাজ্য বুদ্ধিজীবী সেলেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
আর কারা মনোনীত হয়েছেন?
রাষ্ট্রপতির ঘোষণায় আরও জানানো হয়েছে—গোয়ার নতুন রাজ্যপাল হচ্ছেন পুষ্পপতি অশোক গজপতি রাজু, লাদাখের নতুন লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর হবেন ব্রিগেডিয়ার বিডি মিশ্রা।
কেন অসীম কুমার ঘোষের মনোনয়ন গুরুত্বপূর্ণ?
একাধিক মহলের মতে, বহুদিন রাজনৈতিক আড়ালে থাকলেও অসীম ঘোষের অভিজ্ঞতা ও বৌদ্ধিক নেতৃত্বের মূল্যায়ন করেই তাঁকে এই সাংবিধানিক পদে মনোনীত করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, “এই মনোনয়ন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি।”
আগামী বছর বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপির সাম্প্রতিক পদক্ষেপ দুটি বড় কৌশল হিসেবে উঠে এসেছে—একদিকে বিজেপি বাংলা-বিরোধী ও বহিরাগত তকমা মুছতে চায়, অন্যদিকে, পুরনো নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব বাড়িয়ে মনোবল চাঙ্গা করার প্রচেষ্টাও চলছে। দিন কয়েক আগেই দিলীপ ঘোষের গুরুত্ব বৃদ্ধির খবর এসেছে, এবার আরও এক প্রবীণ নেতাকে বড় দায়িত্ব দিয়ে পদ্ম শিবির দেখাতে চাইছে—দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার দিতে প্রস্তুত তারা।
২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস জোরালো প্রচারে বিজেপিকে “বাঙালি বিরোধী” রূপে তুলে ধরেছিল। সেই ‘ইমেজ’ পাল্টাতে হরিয়ানার রাজ্যপাল পদে একজন বঙ্গ বিজেপি নেতার মনোনয়ন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।