রোজগার মেলা না নাটকীয়তা? প্রশ্নের মুখে মোদীর ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৮:০০: মোদী জমানায় বাড়ছে বেকারত্ব , ঘুচছে না মধ্যবিত্তের কষ্ট। “আচ্ছে দিন” কি এইটাই? ১০ বছরে ২২ কোটির বদলে মাত্র ২২ লক্ষ চাকরি!
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু ১৫ লক্ষ টাকা কোনো সাধারণ ভোটারের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। আর বছরে ২ কোটি চাকরির হিসেব কী?
সম্প্রতি বিজেপির (BJP) রাজ্যসভার সদস্য ব্রিজ লালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘পার্সোনেল, পাবলিক গ্রিভান্স এবং আইন ও বিচারবিভাগীয়’ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘ফিলিং আপ অব ভ্যাকান্সিজ ইন দ্য সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট’ শীর্ষক এই বৈঠকে ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি) এবং স্টাফ সিলেকশন কমিশন (SSC) জানিয়েছে, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কার্যকালে মোট নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৭৫টি।
এই বৈঠকে ডিওপিটি’র (DOPT) সচিব রচনা শাহ এবং এসএসসি’র চেয়ারম্যান রাকেশ রঞ্জন সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাঁরা ২২ লক্ষ চাকরির দাবি তুলেছিলেন, কিন্তু এই পরিসংখ্যান যে স্রেফ তথ্যের ‘জাগলারি’ (jugglery) তা বৈঠক এগোতেই প্রকাশ্যে চলে আসে।
কারণ, পদোন্নতিকেও তাঁরা নিয়োগের তালিকায় দেখিয়েছিলেন। সরকারি কর্তাদের দাবি ছিল, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ে, ইউপিএসসি এবং স্টাফ সিলেকশন কমিশনের মাধ্যমে ১১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৭৫ জনের চাকরি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রেলেই চাকরি পেয়েছেন ৫ লক্ষ ৮ হাজার ৬৯৯ জন।
এছাড়াও, খালি থাকা বাকি পদে পদোন্নতির মাধ্যমে ‘নিয়োগ হয়েছে’ ৭ লক্ষ ৮০ হাজার ৪১ জনের, যা ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। এমনকি, বর্তমানে ২ লক্ষ পদে নিয়োগের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই দাবি শুনেই ডিএমকে’র পি উইলসন এবং তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়ের (Sukhendu Sekhar Roy) মতো সাংসদরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, তাঁরা সরকারি কর্তাদের কাছে জানতে চান, পদোন্নতিকে কীভাবে নতুন চাকরি (Job) হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে? তাছাড়া পদোন্নতির হিসেব মাত্র গত তিন বছরের, তাহলে কি তার আগে আট বছরে কোনো পদোন্নতি হয়নি? সাংসদদের আরও প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য এমন বেকার প্রার্থী ২০১৪ সালে দেশে কতজন ছিলেন এবং এখনই বা কত?
কেন্দ্র (Centre) এই হিসাব স্পষ্ট করতে পারেনি এবং ‘রোজগার মেলা’র মতো কর্মসূচির মাধ্যমে বারবার ফানুস ফুলিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এ পর্যন্ত ১৬ বার এই রোজগার মেলা (Rojgar Mela) অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র নিয়োগপত্র তুলে দিয়েই ‘নাটকীয় কর্মসূচি’ পালন হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। বাস্তব চিত্র হলো, প্রতি বছর নিঃশব্দে বেকারত্ব (Unemployment) বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মধ্যবিত্তের জীবনে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
বৈঠকে বিরোধী সাংসদরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদ চুপিসাড়ে বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি, যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে এই পদগুলি ‘জেনারেল’ করে দেওয়া হচ্ছে।
একের পর এক এমন প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকারি আধিকারিকরা থতমত খেয়ে যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে কমিটির চেয়ারম্যান তাঁদের পরের বৈঠকে লিখিত জবাব দিতে বলেছেন। তবে এতে বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি প্রশ্নের মুখ থেকে রক্ষা পায়নি।
বিরোধীরা (Opposition) স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদীর (Modi) আশ্বাস অনুযায়ী ১১ বছরে ২২ কোটি চাকরি হওয়ার কথা ছিল। এমনকি সরকারি তথ্যের ‘জাগলারি’ মেনে নিলেও সংখ্যাটা মাত্র ২২ লক্ষ। বিরোধীদের প্রশ্ন, এটাই কি ‘আচ্ছে দিন’?