আগামীদিনে আপনাদের থামাতে কী করতে হবে দেখে নেব, বাঙালিদের হেনস্থার প্রতিবাদে রাজপথে গর্জে উঠলেন মমতা

বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন,”বেশ কিছুদিন ধরে আমি লক্ষ্য করছি, আমি অত্যন্ত লজ্জিত, ব্যথিত, দুঃখিত, মর্মাহত চারদিকের এইসব ঘটনায়

July 16, 2025 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

দৃনিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৫৭: বিজেপি (BJP) শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগে আজ প্রতিবাদে রাজপথে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। কলেজ স্কোয়ার থেকে ডরিনা ক্রসিং পর্যন্ত হয় এই মিছিল।

পদযাত্রার শেষে ডরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছে বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমেই তিনি ডিভিসির ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে ডিভিসি (DVC), এই জল ছাড়াই বিপত্তি তৈরী হয়েছে। অনেক মানুষ বন্যা কবলিত। বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বর্ধমানের কিছুটা, হুগলি, হাওড়া, নদিয়ার কিছুটা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ সারা বাংলায় অনেকে প্লাবিত হয়েছেন। তাঁদের জন্য গতকাল আমরা মিটিং করেছি।”

এরপর তিনি উপস্থিত সকলকে ২১ জুলাইয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, “২১ জুলাই আপনাদের আসতে হবে। ২১ জুলাইয়ের আমন্ত্রণ সকলকে আমি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে করে গেলাম।”

বক্তৃতার শুরুতেই তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান। কারণ, এতো বৃষ্টিতেও সকলে জলে ভিজে এই মিছিলে হেঁটেছেন। তিনি বলেন, “এখন কলকাতায় জল কম জমে। একটি দু’টি ওয়ার্ড ছাড়া। আগে একটু বৃষ্টি হলেই পুরো জল জমে যেত। এখন ৯৯ শতাংশ কভার করা হয়েছে। যেটুকু বাকি রয়েছে ২০২৬ সালের মধ্যে টোটালটাই কমপ্লিট করে দেওয়া হবে।আজ ২-৪ টে জেলায় জেলায় মিছিল হবে।”

এরপর বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন,”বেশ কিছুদিন ধরে আমি লক্ষ্য করছি, আমি অত্যন্ত লজ্জিত, ব্যথিত, দুঃখিত, মর্মাহত চারদিকের এইসব ঘটনায়। একটা নোটিফিকেশন লুকিয়ে বানিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যে পাঠিয়ে বলা হয়েছে যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, তাঁকে অ্যারেস্ট করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে। হোল্ডিং এরিয়াতে পাঠিয়ে দেবে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও এমন হচ্ছে। অন্য ভাষাভাষীর মানুষকে আমরা সম্মান করি, বাংলায় অনেক অবাঙালি আছেন। কিন্তু বাঙালির ওপর অত্যাচার হলে আমরা ছাড়বো না। বিজেপি গরিব বিরোধী। বিজেপির আচরণে আমি ব্যথিত ও মর্মাহত।”

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যে গরিব লোকগুলো বাইরে কাজ করতে যাচ্ছে তাদের সাথে কেন এমন আচরণ? দক্ষতার জন্যই বাংলা থেকে শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের ২২ লক্ষ বাংলার মজদুর আছে। কেন্দ্রের মনে রাখা উচিত, আমাদের রাজ্যেও দেড় কোটির বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে কখনও এমন করি না। আমরা সম্মান দিই আর আপনি বেইজ্জত করছেন। আমাদের পুরসভায় ৯০ শতাংশ কর্মী বিহারের। ওরা কাজ করতে পারে, তাই করে। আমরা কি কাউকে বের করে দিয়েছি? বাংলা কি ভারতের অংশ না? বাঙালিরা আপনাদের কি ক্ষতি করেছে? বাঙালিদের উপর এত রাগ কেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখিবন্ধন করেছিলেন। জনগণমণ অধিনায়ক কি একজন বাঙালি লেখেননি? তখন তো দেশ ভাগ হয়নি, একজোট ছিল।”

বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনুপ্রবেশ দেখার কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে সিআইএসএফ, সিআরপিএফ আছে।ভোটার তালিকায় কারচুপি করে মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে জিতেছে বিজেপি। এভাবে ভাগাভাগি করে দেশ চালাবেন?


মতুয়াদের বাড়ি গিয়ে ভোট বিক্রি করেন আর এখন মতুয়াদের ওপর অত্যাচার করছেন? বন্যাত্রাণে একটা টাকাও দেন না, ভোট চাইতে আসেন কোন মুখে? খালি মিথ্যে কথা বলে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার আর গদি মিডিয়াকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ ছড়ায়, এভাবে বেশিদিন চলবে না। আমি শুনেছি বিহারে ৩০.৫ লক্ষ ভোট বাদ দিয়ে দিয়েছে। বিহার বাংলাতেও ওরা কারচুপি করার পরিকল্পনা করছে। আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করব। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও আমরা ছাড়ব না।”

বাঙালিদের হেনস্থা করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দিল্লিতে বাঙালিদের জল বিদ্যুৎ সব বন্ধ। অন্ধকূপে রেখে দিয়েছেন। আমাদের এমপি-রা ধর্না দিয়েছে সেখানে ৪৮ ঘণ্টা। মহুয়া ছত্তিশগড়ে গিয়েছেন আটকে পড়া বাঙালিদের ছাড়াতে। গদি মিডিয়া, সাংবাদিকদের বলছি, খবর করতে গিয়ে বাংলায় কথা বললে আপনাদেরও ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতে পারে, তাই সাবধান। কোচবিহারের বাসিন্দাদের অসম সরকার নোটিস পাঠিয়েছে। তাদের কী অধিকার আছে?”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন “স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাংলার লোক আছেন, যাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পঞ্জাবিরা। যাঁরা দেশ স্বাধীন করেছেন আজ এনআরসির নামে তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে? যাকেই সন্দেহ হবে জেলে নিয়ে এক মাস রেখে দিতে পারো। বিনা বিচারে এক মাস রেখে দেবেন? এটা কী! এ তো জরুরি অবস্থার থেকেও বেশি। ইন্দিরা গান্ধীকে গালাগাল দিয়ে সুপার ইমার্জেন্সি ডে পালন করলেন। তা হলে আপনারা কী করছেন! এ তো জরুরি অবস্থার থেকেও বেশি কিছু। অবৈধ ভাবে আইন করেছে, যে আইনের মানেই বোঝে না।”

বিজেপিকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জের সুরেই মমতা বলেন, “নিজেরা ক্ষমতায় থাকবে কিনা আগে সেটা বিচার করুন, তারপর বাঙালিদের বিচার করবেন।আমরা মানুষের ভাষায় আমরা কথা বলি। আমি বাংলায় কথা বলি এটা আমার গর্ব। আমি বাংলায় বেশি করে কথা বলব। ক্ষমতা থাকলে আগে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখো।”

সবশেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “সবশেষে সতর্কবার্তা দিয়ে গেলাম। মারবও না কাটবও না। আপনার মতো ভাষাও বলব না। যদি না থামেন, আগামীদিনে আপনাদের থামাতে কী করতে হবে দেখে নেব। আক্রমণ করলে পালটা প্রত্যাঘাত হবেই।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen