মোহিত সুরির Saiyaara: চেনা গল্পে নতুন আবেগ
অনীত পাড্ডা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বাণীর চরিত্রে অত্যন্ত পরিশীলিত অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তার সংযত অভিনয় প্রশংসাযোগ্য।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৫০: মোহিত সুরির সায়ারা (Saiyaara) নতুন কিছু নয়। কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বরং বহুবার দেখা চেনা গল্পকেই নতুন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক। বহুবার দেখা চেনা প্রেম ও বিচ্ছেদের গল্পকে পরিচালক নতুন মোড়কে সাজিয়েছেন, যা দর্শককে নিয়ে যায় এক ভিন্ন অনুভূতির জগতে। ছবি দেখতে গিয়ে কখনও ‘আশিকি ২’ বা ‘এক ভিলেন’-এর কথা মনে পড়ে যায়, আবার কিছু দৃশ্য ‘৫০ ফার্স্ট ডেটস’-এর মতো সিনেমার ঝলক দেখায়।
‘সায়ারা’ আবর্তিত হয়েছে উঠতি রকস্টার কৃষ কাপুর এবং স্নিগ্ধ, নিরীহ স্বভাবের বাণী বাত্রার প্রেমকাহিনীকে ঘিরে। ছবির শুরুতেই বাণীকে দেখা যায় বিয়ের রেজিস্ট্রেশন অফিসে তার প্রেমিক মহেশ আইয়ারের অপেক্ষায়। কিন্তু ফোন করে মহেশ জানায় সে আমেরিকায় চলে যাচ্ছে এবং অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেছে। এই অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় মানসিকভাবে আরও গুটিয়ে যায় বাণী।
ছয় মাস পর, বাণী একটি ম্যাগাজিনে মিউজিক জার্নালিস্ট হিসেবে তার প্রথম চাকরিতে যোগ দেয়। সেখানেই তার পরিচয় হয় কৃষের সঙ্গে। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে, যখন কৃষ অভিযোগ তোলে যে তাদের ব্যান্ড ‘জোশ’-এর ফিচারে শুধুমাত্র ‘নেপো কিড’-এর নাম হাইলাইট করা হয়েছে।
একটি মিউজিক অ্যাসাইনমেন্টের সূত্র ধরে কৃষ ও বাণীর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বাণীর লেখা কবিতা কৃষকে মুগ্ধ করে এবং ধীরে ধীরে তারা একে অপরের আবেগের ভরসা হয়ে ওঠে। কৃষের জীবনেও রয়েছে জটিলতা—এক মদ্যপ, বিধ্বস্ত বাবা, যাকে সে সারাজীবন সামলেছে।
পরবর্তীতে কৃষ চায় বাণী তার পাশে থাকুক এবং তার জীবনকে বদলাতে সাহায্য করুক। এটি ‘a woman as a man’s rehab’ অর্থাৎ, একজন নারী একজন পুরুষের পুনর্বাসন, এই চেনা ছকের পুনরাবৃত্তি মনে হলেও, ধীরে ধীরে কৃষ-ই হয়ে ওঠে বাণীর রক্ষাকর্তা।
ছবির দুর্বলতা এর চিত্রনাট্য। বাণীর শারীরিক অসুস্থতা এবং ক্লাইম্যাক্স সহজেই অনুমেয়, যার ফলে গল্পে থ্রিল বা নাটকীয়তার ঘাটতি দেখা যায়। ‘সায়ারা’ একসাথে অনেক কিছু বলতে চায়, কিন্তু শেষমেশ কিছুটা অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিছু মুহূর্ত অনবদ্য হলেও, বেশিরভাগ দৃশ্যই সাধারণের গণ্ডিতে আবদ্ধ।
তবে যা এই সিনেমার প্রাণ, তা হলো আহান পাণ্ডে এবং অনীত পাড্ডার মধ্যকার দুর্দান্ত রসায়ন। মোহিত সুরি দক্ষতার সঙ্গে তাদের অভিনয়গুণ তুলে ধরেছেন। আহানের আত্মপ্রকাশ সত্যিই অভাবনীয়। তার চোখের অভিব্যক্তি এবং গভীর কণ্ঠস্বর তাকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেবে। আহানের পারফরম্যান্সকে অনায়াসে রণবীর কাপুরের ‘সাওয়ারিয়া’-র আত্মপ্রকাশের সঙ্গে তুলনা করা যায়—অভিনয় দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, প্রতিভা থাকলে অন্যান্য ঘাটতি ঢাকা পড়ে যায়।
অন্যদিকে, অনীত পাড্ডা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বাণীর চরিত্রে অত্যন্ত পরিশীলিত অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তার সংযত অভিনয় প্রশংসাযোগ্য।
সঙ্গীতও বিশেষ করে উল্লেখ করার মতো—টাইটেল ট্র্যাকটি তনিষ্ক বাগচী, ফাহিম আবদুল্লাহ ও আর্সলান নিজামির সুরে হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
‘সায়ারা’ হয়তো নতুন কিছু নয়, তবে এটি আবেগে পরিপূর্ণ। প্রেম, বিচ্ছেদ, আত্মত্যাগ এবং হৃদয় ভাঙার গল্পে ভরপুর এই সিনেমা আপনাকে আবেগপ্রবণ করবেই। ছবিটি হয়তো চলচ্চিত্র জগতে ইতিহাস গড়বে না, কিন্তু বলাই যায় নতুন দুজন প্রতিভাবান অভিনেতাকে উপহার দিল।