পেঁয়াজেও বাংলাকে বঞ্চনা কেন্দ্রীয় সংস্থার
কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানি নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও গোটা দেশেই ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার অধিকাংশ খুচরো বাজারেই দাম ইতিমধ্যে ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘নাফেড’-এর সংগ্রহ করা পেঁয়াজ ন্যায্য মূল্যে এখনও পশ্চিমবঙ্গের বাজারে পৌঁছয়নি। গতবারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার নাফেডকে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছিল। সংস্থাটি এবার প্রায় এক লক্ষ টন পেঁয়াজ সংগ্রহ করেছে, যা গতবারের থেকে অনেকটাই বেশি। নাফেডের সঙ্গে কারবার করেন এমন কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী সরকারি মহলে অভিযোগ তুলেছেন, ওই সংস্থার কাছ থেকে পেঁয়াজ চেয়েও বিশেষ একটা পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে খবর আছে যে ভোটমুখী বিহারে প্রচুর নাফেডের পেঁয়াজ যাচ্ছে। বিধানসভা ভোটের আগে বিহারে পেঁয়াজের দর কিছুটা ‘ঠান্ডা’ রাখতেই সেখানে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ পাঠানো হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দপ্তর গতবারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সময় নাফেডের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে কিছু পরিমাণ পেঁয়াজ পেয়েছিল । তা ‘সুফল বাংলা’র স্টলের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। সুফল বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য কৃষি বিপণন পর্ষদের ডেপুটি ডিরেক্টর গৌতম বন্দ্যেপাধ্যায় জানিয়েছেন, গতবার কিছুটা পেলেও এবার এখনও নাফেডের কাছ থেকে কোনও পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। নাফেড থেকে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না সেটা তাঁর জানা নেই। রবিবার সুফল বাংলার স্টল থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। পাইকারি খোলা বাজার থেকে কিনে সুফল বাংলায় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে এখানেও দাম গত কয়েকদিনে অনেকটাই বেড়েছে।
এরাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নাফেড আধিকারিক অনিন্দিতা গুহ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ কেনার কোনও প্রস্তাব তাঁরা পাননি। তবে এরাজ্যে সংস্থার বেশ কিছু কমিশন এজেন্ট আছেন। তাঁদের বাজার দরে পেঁয়াজ সরবরাহ করা হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিহার বা অন্যকোনও রাজ্যে পেঁয়াজ পাঠানো হচ্ছে কি না সেব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই। এদিকে, রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী মহলের সূত্রে তাঁদের কাছে খবর এসেছে যে নাফেডের পেঁয়াজ বেশি পরিমাণে বিহারে পাঠানো শুরু হয়েছে। নাফেডে নথিভুক্ত ব্যবসায়ীরা চেয়েও সংস্থার কাছ থেকে খুব কম পরিমাণে পেঁয়াজ পাচ্ছেন। এমন অভিযোগও এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাজ্যের বাজারে পেঁয়াজের জোগানের এখন পুরোটাই আসছে ভিন রাজ্য থেকে। ফলে রাজ্য সরকারের পক্ষে এখানকার উৎপাদিত আলুর দাম নিয়ে সক্রিয়তা দেখানো সম্ভব হলেও পেঁয়াজের ব্যাপারে বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে। সরকারি সক্রিয়তার জন্য গত কিছুদিন ধরে আলুর দাম কিছুটা স্থিতিশীল আছে। দাম চড়া থাকলেও আরও বাড়ছে না। কিন্তু ভিন রাজ্য থেকে আসা পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। রবিবার পাইকারি বাজারেই দাম ৪০ টাকা ছুঁয়েছে। কয়েকদিন আগে এই দাম ছিল ২৭-২৮ টাকা। ফলে খুচরো বাজারে দাম ৫০ টাকা অতিক্রম করার সম্ভাবনা আছে। প্রবল বৃষ্টির জন্য দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশে নতুন ওঠা পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রবল বৃষ্টিতে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজেরও ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ী মহলে খবর এসেছে। নাসিকের পাইকারি বাজারে দাম কেজিতে ৩০ টাকা ছুঁয়েছে।