কেন্দ্র চাষিদের ‘বন্ধন’ মুক্তির কথা বলার অনেক আগেই কর মকুব করেছে রাজ্য
নতুন কৃষি আইন চালু করার পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম যুক্তি ছিল এর মাধ্যমে এপিএমসি (এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেটিং কমিটি) আইন দ্বারা পরিচালিত বাজারগুলির ‘বন্ধন’ থেকে চাষিরা মুক্তি পাবেন। এই বাজারগুলিতে চাষিদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করার ফলে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে কেন্দ্র সওয়াল করে। কিন্তু রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এরাজ্যে এপিএমসি আইনে পরিচালিত বাজারগুলিতে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্যের উপর থেকে কর আদায়ের প্রক্রিয়া এক বছর আগেই প্রত্যাহার হয়েছে। বাকি কৃষিপণ্যের উপর চেক পোস্টে যে কর আদায় করা হতো, সেটাও এপ্রিল থেকে বন্ধ। এতে অবশ্য রাজ্য সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু চাষিদের স্বার্থে এই ক্ষতি বহন করছে সরকার। রাজ্যজুড়ে যে ১৮৬টি কিষাণ বাজার সরকারি খরচে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানেও বেচাকেনার জন্য চাষি বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক পয়সা কর আদায় করা হয় না। প্রসঙ্গত, পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ অনেক রাজ্যে এপিএমসি বাজার ও মান্ডিগুলিতে কৃষিপণ্য বেচাকেনার উপর চড়া হারে কর নেওয়া হয়। ওই কর রাজ্য সরকারগুলির আয়ের একটা বড় উৎস। কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে বলা হচ্ছে, এরাজ্যে চাষিদের এপিএমসি বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যতামূলক ব্যাপার নেই। চাষিরা নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজারে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এপিএমসি আইন পরিচালিত পাঁচশোর উপর বাজার আছে। এই বাজারগুলি পরিচালনা করে প্রতি জেলার নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি। কমিটিগুলি কৃষি বিপণন দপ্তরের অধীন রাজ্য কৃষি বিপণন পর্ষদ তত্ত্বাবধানে চলে। রাজ্যের এপিএমসি আইনটি ১৯৭২ সালে তৈরি হয়। এই আইনে আগে প্রায় সব কৃষি ও প্রাণিজাত পণ্যের বাজারে কেনাকাটার উপর কর বসানোর সুযোগ ছিল। তৃণমূল সরকার ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করে বেশকিছু কৃষিপণ্যকে এর আওতার বাইরে নিয়ে আসে। অর্থাৎ ওই কৃষিপণ্যগুলিকে প্রদেয় কর থেকে ছাড় দেওয়া হয়। পরে গত বছরের আগস্টে কৃষি বিপণন দপ্তর একটি নির্দেশিকা জারি করে কর ছাড়ের সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করে। সব ধরনের ফল ও সব্জির উপর থেকে কর উঠিয়ে দেওয়া হয়। চা সহ বেশ কিছু কৃষিপণ্যকে ছাড় দেওয়া হয়। মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, পশুখাদ্য, মাছের খাদ্য প্রভৃতি বেচাকেনার উপর থেকে কর তুলে দেওয়া হয়। এই করের হার ছিল মূলত এক শতাংশ।
বাকি যে কৃষিপণ্যগুলির উপর কর ছিল, তা চেকপোস্ট থেকে আদায় করা এখন বন্ধ আছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গোটা রাজ্যে প্রায় একশোর কিছু বেশি এই ধরনের চেকপোস্ট ছিল। এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, চেকপোস্টে যে কর্মীরা কাজ করতেন, তাঁদের সরকারি কিষাণ বাজারে কাজে যুক্ত করা হবে। তবে কৃষি বিপণন দপ্তর চেকপোস্ট তুলে অনলাইন ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে করের আওতাভুক্ত কৃষিপণ্যের উপর কর আদায় করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। কিন্তু অধিকাংশ এপিএমসি বাজারে সেটা শুরু হয়নি। এই অবস্থায় কিছু আয়ের ব্যবস্থা করতে গাড়ি ব্যবহার করে কর আদায় করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে দপ্তর। -ফাইল চিত্র