পুজোর আগে বাড়িতেই বাড়তি মেদ ঝড়াতে চান? দেখে নিন উপায়
হাতে আর মাত্র এক মাস। বাঙালির পুজো মানে প্রাণ খোলা আনন্দ। পুজোর আগে প্রত্যেকেই চায় একটু চাকচিক্য। প্যান্ডেল হপিংয়ের সময় পারফেক্ট ছবির জন্য ওজন যেন না কমালেই নয়।
ফলে এসময় থেকেই প্রতি বছর ভিড় বাড়ে জিমে। শুরু হয় ডায়েটের কড়াকড়ি। আনলক পর্বে জিম ও যোগা কেন্দ্র খুলে গেলেও এখনও সবাই নিশ্চিন্ত মনে সেখানে যেতে পারছেন না। তবে বাড়িতে বসেও কিন্তু সামান্য পরিশ্রমে রুটিন মেনে এক মাসে পেটের মেদ ঝরানো সম্ভব। কিন্তু কিকরে?
কারা কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন?
প্রতিটি ব্যায়াম ১০ থেকে ১৫ বার করে করতে পারলে ভালো। এক্সারসাইজের আগে কম করে ৫ থেকে ৭ মিনিট ওয়ার্মআপ করতেই হবে। এই পর্যায়ে প্রাণায়াম সহযোগে সূর্য নমস্কার শরীর গরম করতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে তা মেদ কমাতেও সাহায্য করে।
কিন্তু যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ এবং কোমরের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁরা সূর্য নমস্কারের পদাহস্তাসন ধাপটি এড়িয়ে চলুন। এরপর করতে হবে পশ্চাৎ অর্ধ চন্দ্রাসন এবং পার্শ্ব অর্ধ চন্দ্রাসন।
এই দুটো ব্যায়ামেই গোটা শরীরের ভালো ওয়ার্মআপ হয়। এছাড়াও বাড়িতে কোনও থাম বা গ্রিল ধরে বৈঠকের মতো ওঠবসও করা যায়।
কী কী ব্যায়ামে কমবে ভুঁড়ি?
পেটের মেদ কমাতে কিছু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যায়াম হল
ভুজঙ্গাসনে শুয়ে বুক ও মাথা উঁচু করে হাত দুটো সামনের দিকে টানটান করে দিন। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে থুতনি মাটিতে ঠেকান। একে বলা হয় ভুজঙ্গ ডন। হাত, কোমর ও পেটের মেদ এবং বাতজনিত ব্যাথা কমাতে এই ব্যায়াম কার্যকর।
পরের ব্যায়ামে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। মাথায় উপর থেকে হাত জোড়া এগিয়ে এনে দুই পায়ের বুড়ো আঙুল ধরতে হবে। এর ফলে পেটের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। একে বলা হয় শয়ন পরিবর্তিত পশ্চিম উত্থানাসন। যাঁদের কোমরে ব্যথা তাঁরা এই আসনের পরিবর্তে শয়ন অর্ধ পশ্চিম উত্থানাসন আসনটি করতে পারেন। চিত হয়ে শুয়ে হাত দুটো পেটের উপরে রাখুন।
তারপর মাথা পিছনে হেলিয়ে পেট উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যেও আসনটি বিশেষ উপকারী। এরপর করতে পারেন লেগ রেইজ বা শয়ন উত্থান পদাসন। চিত হয়ে শুয়ে ক্রমাম্বয়ে ডান ও বাম পা যতটা সম্ভব ওঠানো ও নামানো। যাঁরা পারবেন দুটো পা জোড়া করেও তুলতে ও নামাতে পারেন। ফল আরও ভালো হবে।
করা যেতে পারে ধনুরাসন এবং যে কোনও প্রাণায়ম। সবশেষে চেয়ারে বা পদ্মাসনে বসে করতে পারেন সিংহাসন। এই আসনটি শ্বাসনালীর ক্ষেত্রে উপকারী। আর করোনা তো গলার অঞ্চলেই আক্রমণ হানে।
‘স্লিম’ নয়, চাই সুস্থতা
শরীরচর্চার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ ব্যায়ামের অন্যতম উদ্দেশ্য হল শরীরে শ্বাসবায়ুর চলাচল সুগম করা। মাস্ক পড়লে সেটা সম্ভব নয়।
অনেকেই চটজলদি ফলের আশায় বিভিন্ন ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টে ভরসা করেন। পরিশ্রম না করে এইভাবে ওজন কমানো সম্ভব নয়। অন্যথায় শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
পুরনো চোট থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়েই ব্যায়াম করা উচিত।
ওয়ার্মআপ আবশ্যিক। না হলে শরীরের কোনও অস্থি সংযোগস্থল বা মাংশপেশীতে আঘাত লাগতে পারে।
নিয়ন্ত্রণে রাখুন ডায়েট
ভুঁড়ি কমাতে গেলে শুধুমাত্র ব্যায়াম করলেই চলবে না, সঙ্গে ডায়েট (৮০০ ক্যালরি) মেনে চলতে হবে। মনে রাখবেন, এক্সারসাইজ এবং সুষম আহারের যৌথ ফলাফলই হল নীরোগ মেদহীন শরীর।
১. ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চাপে নিয়ম মাফিক এক্সারসাইজ না করতে পারলে অনন্ত লাঞ্চ ও ডিনারের পর ১৫ মিনিট বাগান বা বাড়ির ছাদে হাঁটা উচিত।
২. বেশকিছু ওষুধ আমাদের ওজন বাড়ায় (যেমন ইনসুলিন)। ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
৩. লকডাউনে বাড়িতে থেকে অনেকেই ‘স্ট্রেস ইটিং’ করছেন। এটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সারাদিনে কী কী খাচ্ছেন তার তালিকা প্রস্তুত করে ডাক্তারবাবু বা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করলে ঠিকঠাক খাওয়া হচ্ছে কিনা, জেনে নেওয়া যায়। বিশেষত বাড়িতে অতিরিক্ত তেলে রান্না করা ও খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
৪. কোনওভাবেই মিল স্কিপ করা উচিত হবে না।
৫. দিনে কম করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক না রাখলে ওজন কমানো বেশ কষ্টকর।
উপোস একবারেই নয়
অনেকেই মনে করেন, উপোস করলে ওজন দ্রুত কমে। একেবারেই ভুল ধারণা। উপোসে একটি পর্যায় পর্যন্ত ওজন কমতে পারে। কিন্তু শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের আবার ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বিশেষত করোনা থেকে বাঁচতে এখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙা রাখা খুব জরুরি। রোজ না মেপে ১৫ দিন পর ওজন মাপলে সুফল চোখে পড়বে। মনোবলও বাড়বে। চিকিৎসাশাস্ত্র বলে, মাসে দেহের ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি ওজন কমানো উচিত নয়। কম সময়ে বেশি ওজন কমতে থাকলে গল ব্লাডারে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।