ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকের উপর ফের অত্যাচার! তামিলনাড়ুতে বাংলা বলায় আটক, কেরলে রহস্যজনক মৃত্যু

তামিলনাড়ুর পেরেমবালাতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরিবারের মুখে খাওয়ার তুলে দেওয়ার জন্য বহুদিন ভিনরাজ্যে থাকতেন রাজীব।

August 11, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:১০: আবারও ভিন রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের উপর অত্যাচার। এবার তামিলনাড়ুতে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য হেনস্তার শিকার হতে হলো টাকি পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজীব শেখকে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তামিলনাড়ুর পেরেমবালাতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরিবারের মুখে খাওয়ার তুলে দেওয়ার জন্য বহুদিন ভিনরাজ্যে থাকতেন রাজীব।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে ,২২ জুলাই হঠাৎ তামিলনাড়ুর পেরেমবালা থানার পুলিশ রাজীব শেখকে আটক করে স্থানীয়। সেখানকার স্থানীয় পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের রাজীবকে অন্য দেশের নাগরিক সন্দেহে আটক করে। রাজীবের পরিবারের কাছে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের সব প্রমাণ চাওয়া হয়। রাজীবের পরিবার এই খবর পাওয়া মাত্রই রাজীবের সব নাগরিকত্বের প্রমাণ পত্র সেই থানায় পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর রাজীবের পরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারলেও এখন আর রাজীবের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখতে পারছেন না। এই ঘটনার ২১ দিন কেটে গেলেও এখনও ছাড়া পাননি রাজীব।

রাজীবের স্ত্রী জানিয়েছেন, “আমরা সমস্ত কাগজপত্র আগেই জমা দিয়েছি। ওখানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। অথচ এখন শুধু বাংলা বলার জন্য আটকে রাখা হয়েছে। ফোনেও আর কথা বলতে পারছি না। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমরা ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”

পরিবারের বড় ছেলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমার বাবাকে একমাত্র বাংলা বলার জন্যই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। বাবার উপার্জনেই আমাদের সংসার চলত। এখন সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, দয়া করে বাবাকে ফিরিয়ে আনুন।”

ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনকেও নাড়া দিয়েছে। টাকি পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোবিন্দ সরকার জানান, “এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নবান্নে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকারের তরফে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

অন্য দিকে কেরলের মালাপ্পুরম জেলার এক জঙ্গলে উদ্ধার হল আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার এক যুবকের পচাগলা দেহ। মৃতের নাম আবুল হোসেন।বয়স ২৬। তিনি ফালাকাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং পেশায় রংমিস্ত্রি ছিলেন। প্রায় একমাস আগে জীবিকার সন্ধানে তিনি কেরলের ত্রিশূরে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন স্ত্রী ও দুই বছরের ছেলেকে।

পরিবারের দাবি, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রী’র সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয় আবুলের। তারপর থেকে তাঁর ফোনে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। শনিবার আচমকাই মালাপ্পুরম জেলার কোট্টাক্কাল থানার পুলিশ ফোন করে জানায়, একটি জঙ্গলের ভিতর থেকে আবুলের দেহ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধাররে পরে দেহে পচন ধরায় চেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি আবুলের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ত্রিশূর রেলস্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া, তাঁর ভাড়া বাড়ির কাছে লাগানো একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের দিকে আবুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে জোরে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। সেই কথোপকথনের পরই যেন তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।

পরিবারের পক্ষ থেকে আবুলের কাকা আমিনুল হক বলেন, “আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আবুল আর নেই। মাত্র এক মাস হল নতুন কাজে যোগ দিয়েছিল। এরকম অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই।”

পুলিশ কীভাবে দেহের সন্ধান পেল, তা পরিবারের কাছে স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যেই আবুলের বাবা আমির হোসেন এক আত্মীয়কে নিয়ে কেরলে পৌঁছে গিয়েছেন। সেখানে পোস্টমর্টেমের পরই দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen