জেলবন্দি জনপ্রতিনিধিদের পদ খারিজের বিতর্কিত বিল পেশ করলেন অমিত শাহ, মমতা বললেন গণতন্ত্রের উপর চরম আঘাত
প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তাহলে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ থেকে সরানোর বিধান রেখে এই বিল পেশ করেছে কেন্দ্র।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:০০: তৃণমূলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের ১৩০তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিলটিকে (130th Constitutional Amendment Bill) ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ (Super Emergency) আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এটিকে গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর (Federalism) জন্য ‘ডেথ নেল’ (Death Knell) বলে উল্লেখ করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স পোস্টে এই বিলটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে লিখেছেন, এটি ভারতের গণতন্ত্রকে চিরতরে শেষ করার দিকে এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ। ভোটার তালিকা সংশোধনের (Special Intensive Revision – SIR) নামে ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার (Voting Rights) খর্ব করার জন্য এটি কেন্দ্রের আরেকটি ‘সুপার-ড্রাকোনিয়ান’ (Super-Draconian) পদক্ষেপ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই বিলটি এখন আমাদের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা (Independence of Judiciary) শেষ করতে চায়। আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা ভয়ঙ্কর; এই বিল ভারতীয় গণতন্ত্রের মূলে হিটলারীয় আক্রমণের (Hitlerian Assault) সমতুল্য। এই বিলটি বিচার বিভাগকে তার সাংবিধানিক ভূমিকা থেকে সরিয়ে দিতে চায় এবং ন্যায়বিচার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্যের (Federal Balance) মূল বিষয়গুলিতে আদালতের বিচার করার ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায়। এমন ক্ষমতা দলীয় হাতে (Partisan Hands) অর্পণের মাধ্যমে এই বিল গণতন্ত্রকে বিকৃত করছে। এটি সংস্কার নয়, এটি এক ধরণের পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া – এমন একটি ব্যবস্থার দিকে, যেখানে আইন আর স্বাধীন আদালতের হাতে থাকবে না, বরং ব্যক্তিস্বার্থের হস্তগত হয়ে যাবে, বলেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটি এমন এক শাসন প্রতিষ্ঠার দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা, যেখানে বিচারবিভাগীয় তদন্তকে শেষ করে দেওয়া হবে, সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ভেঙে ফেলা হবে এবং জনগণের অধিকার (People’s Rights) পদদলিত হবে। স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট (Fascist) শাসন ব্যবস্থাগুলোই ইতিহাসে এইভাবে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছিল। এটি সেই মানসিকতারই পরিচয় দেয়, যা বিশ্ব নিন্দা করেছে বিংশ শতাব্দীর অন্ধকারতম অধ্যায় হিসেবে।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আদালতকে দুর্বল করা মানে জনগণকে দুর্বল করা। তাঁদের ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার অস্বীকার করা মানে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রকেই কেড়ে নেওয়া। এই বিল সংবিধানের মৌলিক কাঠামো (Basic Structure of the Constitution) – যুক্তরাষ্ট্রীয়তা, ক্ষমতা পৃথকীকরণ (Separation of Powers) এবং বৈচারিক পর্যালোচনা (Judicial Review) – এর ওপর আঘাত হানে, এমন আইন যা সংসদও সরাতে পারে না। এটি পাশ হতে দেওয়া হলে, এটি ভারতের সাংবিধানিক শাসনের জন্য এক মৃত্যু পরোয়ানা (Death Warrant) হয়ে দাঁড়াবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের সংবিধান ক্ষমতার অস্থায়ী আসনে বসে থাকা ব্যক্তিদের সম্পত্তি নয়। এটি ভারতের জনগণের। এই বিলের উদ্দেশ্য হল এক ব্যক্তি-এক দল-এক সরকারের (One Man-One Party-One Government) ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করা। এই বিল জনগণের রায়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কেন্দ্রকে ক্ষমতাপ্রদান করতে চায়, যা নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রশাসনকে ইডি, সিবিআইয়ের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর শক্তি দেবে। এটি আমাদের সংবিধানের মৌলিক নীতির বদলে এক অশুভ পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমতাপ্রদানের পদক্ষেপ।
তিনি শেষে বলেন, যে কোনও মূল্যে এই বিলের বিরোধিতা করতে হবে! গণতন্ত্রকে এই মুহূর্তে বাঁচাতেই হবে! জনগণ তাঁদের আদালত, তাদের অধিকার এবং তাদের গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার যে কোনও প্রচেষ্টাকে কখনই ক্ষমা করবে না। জয় হিন্দ!
প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তাহলে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ থেকে সরানোর বিধান রেখে এই বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। বুধবার লোকসভায় ১৩০তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিলটি পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিল পেশের সঙ্গে সঙ্গেই লোকসভায় তীব্র প্রতিবাদ করেন বিরোধী সাংসদরা অভিযোগ, এই বিল বিরোধী নেতাদের পদচ্যুত করতে একটি ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হয়ে দাঁড়াবে। অরবিন্দ কেজরীওয়াল ও হেমন্ত সোরেনের গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিল আনা হয়েছে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির।
সমস্ত বিরোধী দলই বিলটির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, এবং এটিকে গণতন্ত্রবিরোধী ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।