মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে সুব্রত Vs শান্তনু: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভাইয়ের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ BJP MLA দাদার
দুই ভাই, একজন কেন্দ্রের মন্ত্রী, অন্যজন বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়ক; এই দুজনের কাজিয়ায় বিজেপির অস্বস্তি বাড়ছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১০:২৭: একেবারে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির কোন্দল। দুই ভাই, একজন কেন্দ্রের মন্ত্রী, অন্যজন বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়ক; এই দুজনের কাজিয়ায় বিজেপির অস্বস্তি বাড়ছে। কার্যত অধিকার দখল ঘিরে বেঁধেছে দ্বন্দ্ব।
সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা শান্তনুর দাদা সুব্রত ঠাকুর দাবি করেন, শান্তনু ঠাকুর নিজের স্ত্রীকে গাইঘাটা বিধানসভা থেকে প্রার্থী করতে চাইছেন। তাই তাঁর(সুব্রত ঠাকুর) বিরুদ্ধে কুৎসা করা হচ্ছে। সুব্রতর অভিযোগ, বছরের পর বছর শান্তনু মতুয়া সংগঠনের টাকা নয়ছয় করছেন। সুব্রতর দাবি, প্রথম থেকেই ভাইয়ের টাকা নয়ছয়ের বিরোধিতা করে আসছেন তিনি। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর। সুব্রত ও তাঁদের মা ছবি রানী ঠাকুর মমতা ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন সম্প্রতি। অন্যদিকে, দুই ভাইয়ের লড়াইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢুকে পড়েনি বিজেপি। তবে সোমবার দুপুরে ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি বিকাশ ঘোষ। তিনি বলেন, দল বিষয়টি দেখছে।
অবিভক্ত বাংলার খুলনায় তৈরি হয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ। দেশভাগের পর সঙ্ঘাধিপতি হন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। ১৯৮০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন সঙ্ঘাধিপতি হন তাঁর বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। ২০১০ সালে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ তৈরি হয়। মতুয়া সংগঠন থেকে ঠাকুরবাড়ির অধিকার নিয়ে কপিলকৃষ্ণ ও তাঁর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের লড়াই ছিলই। ২০১৪ সালে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুর পর অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হন তাঁর স্ত্রী মমতা ঠাকুর। সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে যাবতীয় দায়িত্ব তিনিই পালন করেন। এমনকী রিটার্ন ফাইল পর্যন্ত! ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন মঞ্জুলকৃষ্ণের পুত্র শান্তনু ঠাকুর। মতুয়াদের নিয়ে বিজেপির সংগঠন শুরু করেন শান্তনুর দাদা সুব্রত ঠাকুর। সাংসদ তার উপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঠাকুরবাড়িতে প্রভাব বাড়াতে থাকেন শান্তনু। বিজেপি প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হন তিনি। মহাসঙ্ঘাধিপতি হন সুব্রত।
সুব্রতর অভিযোগ, কেবলই পদের বাড়বড়ন্ত কিন্তু কোনও অধিকার বা ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা ও অধিকার কুক্ষিগত করে ঠাকুরবাড়িতে একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করতে মশগুল শান্তনু। গোটা বছর ধরে মতুয়া সদস্যের কার্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ওঠে। সারা বছর ভক্তদের প্রণামীর টাকাও রয়েছে। অভিযোগ, পুরোটাই শান্তনু ঠাকুর আত্মসাৎ করছে। SIR নিয়ে রব উঠতেই শান্তনু ও সুব্রত মাঠে নামেন। মতুয়াদের শংসাপত্র দিতে আলাদাভাবে ক্যাম্প শুরু করেন। মতুয়া কার্ড এবং ধর্মীয় শংসাপত্রের জন্য মোট ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে শান্তনুর ক্যাম্পে। সুব্রতর ক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছে ১৬০ টাকা। সুব্রত বলেন, ঠাকুরবাড়িতে থ্রেট কালচার ও দালালরাজ চালু করেছেন শান্তনু। মতুয়াভক্তদের টাকা সংগঠনের নামে নিয়ে নয়ছয় করছেন তিনি। কোনও হিসাব দেখাননি। ঘুরপথে শান্তনুর স্ত্রীর নামে মাতৃসেনা ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করায় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
সুব্রতর দাবি, তিনিই ঠাকুরবাড়িতে বিজেপিকে এনেছেন। কিন্তু এখন তাঁর সঙ্গে যা হচ্ছে, তার বিহিত দরকার। আগামী বিধানসভা ভোটে গাইঘাটা থেকে শান্তনু নিজের স্ত্রী সোমা ঠাকুরকে বিজেপির প্রার্থী করবেন বলে এসব হচ্ছে। মমতা ঠাকুরের দাবি, সুব্রতর সমস্ত অভিযোগ, ১০০ শতাংশ সঠিক। এতেই রাজনৈতিক মহলের অনুমান, ঠাকুরবাড়ির রাজনীতিতে খুব তাড়াতাড়ি নতুন সমীকরণ দেখা যেতে পারে। ছাব্বিশের ভোটের আগে আরও কোনও ধাক্কা অপেক্ষা করছে বিজেপির জন্য?