Earthquake: আফগানিস্তানে ফের ভূমিকম্প, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ১৪০০, ত্রাণ পাঠাল ভারত
বন্যার ধাক্কা সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছিল আফগানিস্তান (Afghanistan)। তার মধ্যেই শনিবার গভীর রাতে আঘাত হানল ভয়াবহ ভূমিকম্প।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ৮:৫২: মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান। মঙ্গলবার সকালে রিখটার স্কেলে ৫.২ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয় নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। মার্কিন ভূ-বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের উৎস ছিল ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি, যা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেয়।
এর আগে রবিবার রাতে কুনার প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল আফগানিস্তান। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.০, এবং উৎস ছিল মাত্র ৮–১০ কিলোমিটার গভীরে। এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১,৪১১ জন, আহত হয়েছেন ৩,১২৪ জনেরও বেশি। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৫,৪০০টি বাড়ি, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
ভূমিকম্পের প্রভাব শুধু আফগানিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের কিছু অংশেও। আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করছে ভাঙা রাস্তা ও প্রতিকূল আবহাওয়া।
এর আগে শনিবার গভীর রাতে আঘাত হানল ভয়াবহ ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩। পরপর কয়েকটি আফটার শকে কেঁপে ওঠে পূর্ব আফগানিস্তান। ভোরের আলো ফোটার আগেই কুনার ও নানগরহার প্রদেশে চারদিকে ভাঙা ঘরবাড়ি আর অসহায় কান্নার ছবি। সোমবার রাত পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৮১২ জনে, আহত আড়াই হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে থাকায় আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ কেন্দ্র (USGS) জানিয়েছে, রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে নানগরহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে ছিল ভূমিকম্পের (Earthquake) কেন্দ্রস্থল। ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে উৎস থাকায় ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। নয়টি আফটার শক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। জালালাবাদের কাছাকাছি হওয়ায় পাকিস্তানেও অনুভূত হয় কম্পন।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল। কাঁচা ইট, কাঠ ও পাথরে তৈরি ঘরবাড়ি একের পর এক ধসে পড়েছে। স্থানীয়রা খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী সাদিকুল্লাহ বলেন, রাতের অন্ধকারে হঠাৎ মনে হচ্ছিল গোটা পাহাড় কেঁপে উঠছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কুনার প্রদেশে। হেলিকপ্টার নামানো হয়েছে, চলছে উদ্ধার অভিযান। তবে টানা বন্যার কারণে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যুদ্ধকালীন তৎপরতাতেও বাধা আসছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়াল নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন, “ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে ব্যথিত। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ভারত সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সর্বতোভাবে প্রস্তুত।”
শুধু ভারতই নয়, ইরান, তুরস্ক, আজারবাইজান ও চীনও আফগানিস্তানকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সক্রিয় হয়েছে ইউনিসেফ।
সোমবার আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তিনি জানান, কাবুলে পৌঁছেছে ভারতের পাঠানো প্রাথমিক ত্রাণ-এক হাজার পরিবারের জন্য তাঁবু এবং ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী, যা কুনার প্রদেশে পাঠানো হচ্ছে। জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এটিই কেবল শুরু। আগামী দিনগুলোতেও ত্রাণ পাঠানো অব্যাহত থাকবে। তাঁর কথায়, “আফগানিস্তানের কঠিন সময়ে ভারত সবসময় পাশে আছে।”