বাংলা বিরোধী BJP-কে জনগণের ধাক্কা দিয়ে শূণ্য করে দেব – বিধানসভায় হুংকার মমতার
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ফের গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:৫০: বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ফের গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের হেনস্তার অভিযোগ তুলে মোদী-শাহের সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন তিনি। কেন্দ্রের শাসক দলকে দুর্নীতিবাজ, বাংলা ভাষার উপর আঘাত এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য নষ্ট করার অভিযোগে নিশানা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
সংসদ প্রসঙ্গে মমতা
মমতার অভিযোগ, সংসদ থেকে শুরু করে রাজ্য বিধানসভা- সর্বত্রই বিজেপি সন্ত্রাসের রাজনীতি চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “পার্লামেন্টে আমাদের এমপি-এমএলএদের উপর হামলা হয়েছে। সিআইএসএফ (CISF), বিএসএফ (BSF) ঢোকানো হয়েছে। আমাদের লোককে মারা হয়েছে। কিন্তু আমরা করব না। কারণ এ বাংলা সংস্কারের, স্বাধীনতার লড়াইয়ের বাংলা।”
শেষে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সরাসরি নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশের দরকার নেই মোদীর সরকার, দরকার নেই অমিত শাহের সরকার। বিজেপি হল চোর-গদি চোর, ভোট চোর, গণতন্ত্র চোর। এদের কোনও নৈতিক অধিকার নেই কেন্দ্র শাসন করার। আর কিছুদিনের মধ্যেই ওরা চলে যাবে।”
স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা, বাংলা ভাষা ও বাঙালির মর্যাদা, গণতন্ত্র এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি – সবকিছু নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, “স্বাধীনতার পরে জন্ম নেওয়া বিজেপির স্বাধীনতার লড়াইয়ে কোনও ভূমিকা নেই। এরা দেশের সবচেয়ে বড় ডাকাত, কোটি কোটি টাকায় দেশ বিক্রি করছে। সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ করছে। যখন ক্ষুদিরাম হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে যাচ্ছিলেন, তখন এরা ইংরেজদের দালালি করছিল। এরা বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক।”
বাংলার জয়গান
বাংলা ছাড়া দেশ স্বাধীন হত না। ফাঁসির মঞ্চ থেকে আন্দামান জেল পর্যন্ত বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেলুলার জেলে গিয়ে দেখেছি বাংলার মানুষ সবচেয়ে বেশি জেল খেটেছে। ‘ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান ,আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান’
বন্দেমাতরম স্লোগান কার? ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, জয় হিন্দ স্লোগান কার? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আজও জয় হিন্দ স্লোগান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্লোগান। ওপার বাংলা এপার বাংলায় জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান।
আপনারা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান করতে জানেন না। আর সেই বাংলা ভাষাকে বলছে বিদেশি ভাষা। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক লেবেলে। তার স্থান দেশে পঞ্চম আর দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম। বাংলা বিদেশি ভাষা নয়। যারা বাংলা ভাষার বিরোধী তারা বাংলা বিরোধী। এবং তারা ভারতবিরোধী। কারণ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য এই বাংলা দিয়েছে।
বাংলা ভাষার উপর বিজেপির সন্ত্রাস নিয়ে প্রতিবাদ
তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। “জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি, ‘আমার সোনার বাংলা’ তাঁর গান, নজরুল, সুকান্ত, বঙ্কিম-সবাই বাংলার গর্ব। কিন্তু বিজেপি এদের ভালোবাসে না। আন্দামান সেলুলার জেলে সবচেয়ে বেশি নাম রয়েছে বাংলার বিপ্লবীদের। তবু বাংলাকে আজ তারা হেনস্থা করছে, বাংলাকে পরাধীন করতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না। মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা।”
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মানুষকে অত্যাচার করছে বিজেপি। টাকা আর অস্ত্র দিয়ে ভোট জেতা যায়, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আগামী দিনে বাংলায় বিজেপির কাউকে আর মানুষ নির্বাচিত করবে না। চোরের দলের আর কোনও জায়গা থাকবে না।”
বিরোধী দলনেতাকে আক্রমণ
রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বলেন, “আর যিনি আজকের বড় বড় কথা বলছেন, তিনি চারটে দল বদল করেছেন, আর আপনারা সেই দলবদলু নেতার কথা শুনছেন? আপনারা ভুল পথে পা দিচ্ছেন। আপনাদের বলার সুযোগ দিয়েছি। আপনারা মনে করছেন বাংলাতেও কণ্ঠরোধ করবেন? এত বড় ক্ষমতা! আমার গলা কেটে দিল আমি বাংলায় বলবো। আমি বাংলায় গান গাই। আমি বাংলায় কথা বলি। আমি রাষ্ট্রভাষাও বলি আমি অন্যান্য ভাষা কেউ সম্মান করি। কিন্তু আপনারা বাংলা কে স্তব্ধ করছেন। বাংলাকে জব্দ করার চেষ্টা করছেন। বাংলাকে বদনাম, অসম্মান করার চেষ্টা করছেন।”
তাঁর সংযোজন, “আজকের কে এত বড় ধরনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? যিনি একদিন কংগ্রেস দল করেছেন, যিনি একদিন সমাজবাদী পার্টি দল করেছেন, যিনি একদিন তৃণমূল করেছেন, তারপর বিজেপিতে গেছেন। অর্থাৎ চারটে রাজনৈতিক দল করে এসে তিনি আমাদের জ্ঞান দিচ্ছেন, আমরা তার জ্ঞান শুনবো, যার কোনও নীতি নেই, যার শুধু চরিত্র হনন কাজ।” এছাড়াও তিনি বলেন, “ইডি-সিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজকে বিজেপি করেছেন, এটা আমরা জানি। আগামি দিন বিজেপি থাকবে না। তখন ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেওয়া হবে। বাংলার মানুষ এর বদলা নেবে। রাজনৈতিকভাবে, সন্ত্রাস করে নয়।”
ভাষাগত ঐক্যের বার্তা
এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন ভাষাকে সম্মান জানিয়ে বলেন, “এদের কাজ এটাই বাংলা ও বাংলা ভাষা বিরোধী। আমরা হিন্দি, গুজরাটি, তামিল ভাষার বিরোধী নই। আমরা মনে করি ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান’। ‘সারে জাহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা’। “আপনারা ইংরেজদের সঙ্গে চক্রান্ত করে বাংলাকে ভাগ করে দিয়ে চলে গেছেন, ইংরেজদের সাথে চক্রান্ত করে দেশের রাজধানী বদল করেছেন, আপনারা ইংরেজদের দাসত্ব করেছেন।”
GST কাঠামোয় পরিবর্তন নিয়ে মমতার বক্তব্য
সম্প্রতি জীবন ও স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি মকুব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম স্বাস্থ্য বীমা থেকে জীবন বীমা থেকে টাকা ছাড় দেওয়া উচিত। এটা আমরা প্রথম লিখেছিলাম। আমি আমার দলের জন্য গর্বিত। যা আমাদের দাবিকে সবাই মানতে বাধ্য হয়েছে।” এছাড়াও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তিন চারটে দেশের সাথে চুক্তি করে জনগণের ট্যাক্স বাড়িয়েছেন। আজকে মানুষের জীবন ট্যাক্সে ট্যাক্সে জর্জরিত হয়ে গেছে।”
আরও পড়ুন: ‘মানুষের জয়’, মমতার চাপেই GST কাঠামোয় পরিবর্তন, দাবি তৃণমূলের
বিজেপিকে আক্রমণ
এদিন বিধানসভা কাঁপল মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া স্লোগানে- “আপনারা বাংলার মানুষকে অত্যাচার করেন। মোদী চোর, বিজেপি চোর, অমিত শাহ চোর।” একইসঙ্গে তিনি আহ্বান জানান, “বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও। বাংলা-বিরোধী বিজেপি হঠাও, মানুষ-বিরোধী বিজেপি হঠাও।”
বিজেপিকে (BJP) তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে বড় ব্রোকারদের দল, সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজদের দল বিজেপি। বাঙালির উপর অত্যাচার করেছে। মানুষের উপর সন্ত্রাস চালিয়েছে। বাংলার মানুষ একদিনও চাইবে না এই দলে একজনও বিধায়ক থাকুক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, আবুল কালাম আজাদ- এদের আদর্শের বাংলা, বিজেপির অত্যাচার মেনে নেবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এরা (BJP) দুর্নীতিবাজ, এরা গদি চোর, এরা ভোট চোর। বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার করে, এরা অ্যান্টি-বেঙ্গলি (Anti Bengali)। আমি আমাদের রুলিং পার্টির মেম্বারদের শান্ত থাকতে বলেছি। কিন্তু শান্তিরক্ষা করা একতরফা দায়িত্ব নয়। আপনারা অধ্যক্ষের কথা শুনুন। এই যে কাগজ ছোঁড়া হচ্ছে বিধানসভায়, সেটা অসংসদীয়, অনৈতিক এবং বেআইনি।”
রাজনীতির পাঠ নিয়ে বিজেপিকে তিনি বলেন, “এরা ঘৃণা রাজনীতি করে বৈষম্যের রাজনীতি করে এরা কি দেশ চালাবে? এরা বিভেদ, ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের রাজনীতি করে। আর বাংলা রাজনীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনীতি। বিশ্ব বাংলার রাজনীতি। বাংলা রাজনীতি নজরুলের রাজনীতি।”
শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, “বিজেপিকে জনগণের ধাক্কায় শূন্য করে দেব, বিগ জিরো হয়ে যাবে ওরা।” তিনি আরও বলেন, “যাওয়ার বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। আগামি দিনে ওরা (BJP) আর আসবেনা।”