বাংলায় কথা বলাই ‘অপরাধ’? BJP শাসিত উত্তরপ্রদেশে ৩ দিন ধরে আটক মুর্শিদাবাদের ১৮ শ্রমিক
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হজরত শেখ, সাগর শেখ, আনিজুল শেখ, কালিমউদ্দিন শেখ-সহ সালার, শক্তিপুর, বহরমপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ২০:৫০: ভিনরাজ্যে পেটের টানে কাজ করতে গিয়ে এবার ‘বাংলাদেশি’ তকমা গায়ে জুটল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বস্তি জেলার নগর থানায় তাঁদের তিনদিন ধরে আটক করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও বৈধ অভিযোগ না থাকলেও, শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে সন্দেহ করা হয়েছে তাঁদের।
আটক শ্রমিকরা সকলেই ফেরিওয়ালা, কেউ মাথার চুল কেনেন, কেউ প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হজরত শেখ, সাগর শেখ, আনিজুল শেখ, কালিমউদ্দিন শেখ-সহ সালার, শক্তিপুর, বহরমপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। জানা গিয়েছে, তাঁরা বিগত ২০-২৫ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
অভিযোগ, আটক শ্রমিকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। একজন শ্রমিক লুকিয়ে রাখা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছেন, তাও ঠিকমতো খাবার জুটছে না। সাটুই এলাকার মহসিন শেখ জানিয়েছেন, “১৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে দু’ঘণ্টার জন্য রান্না করতে বলা হচ্ছে। কষ্ট করে ভাত-তরকারি রান্না করছি। কতদিন এভাবে আটকে থাকব জানি না।”
ফজল শেখ বলেন, “আমাদের আধার, ভোটার, প্যান কার্ড সব দেখানো হয়েছে। তবু বলা হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি!” আরশেদ শেখের প্রশ্ন, “বছরের পর বছর মাথার চুল কিনে ফেরি করেছি। হঠাৎ করে বাংলাদেশি হয়ে গেলাম?”
আটক শ্রমিকরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক জানিয়েছেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার এবং শ্রমদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এই ঘটনা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে সরব হয়েছে। ভাষা ও পরিচয়ের ভিত্তিতে শ্রমিকদের হেনস্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।