ঐতিহ্য আর ইতিহাসের ছোঁয়ায় তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির দুর্গাপুজো
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১২:১৫: এক সময়ে শুধুই রাজবাড়ির অন্তঃপুরের অনুষ্ঠান ছিল এই দুর্গাপুজো। তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের রাজকুমারীরা দেবীবরণ করতেন, রানিমা ছিলেন পুজোর প্রধান দায়িত্বে। সেখানে পুরুষ প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। ষষ্ঠ শতক থেকে চলে আসা সেই প্রথা আজ বদলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সর্বজনীন দুর্গোৎসবে।
গত ১৭ বছর ধরে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির মাঠেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে আদি তাম্রলিপ্ত সর্বজনীন পুজো। রাজপরিবারের উত্তরসূরি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের উদ্যোগেই রাজপরিবারের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে পুজো পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের কাছে।
রাজপরিবারের এই ঐতিহ্যবাহী পুজোর বিশেষ আকর্ষণ ইতিহাসের ছোঁয়া। ‘দশকুমার চরিত’-এ উল্লেখ রয়েছে তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের দুর্গোৎসবের কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার কারণে এক সময়ে এই পুজোর ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। পরে আবার শুরু হয় পুজো, যা আজও তার ঐতিহাসিক প্রথা মেনে চলে।
এখনও ষষ্ঠীতে রাজপরিবার থেকে তরোয়াল, তিনটি পাঁঠা ও নৈবেদ্য বর্গভীমা মায়ের মন্দিরে পাঠানো হয় অস্ত্রপুজোর জন্য। সপ্তমী, সন্ধি ও নবমীতেও চলে পশুবলি। শালগ্রাম শিলা আনার প্রথাও অটুট রয়েছে।
রাজবাড়ির মাঠে এখন তুমুল প্রস্তুতি। মণ্ডপসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বড় মেলা—সব মিলিয়ে এই পুজো হয়ে ওঠে জেলার প্রধান আকর্ষণ। অঞ্জলি দেওয়ার সময় প্রায় ৪০টি ব্যাচে ভাগ হয়ে যান ভক্তরা। বিপুল ভিড় সামলাতে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক থাকেন, গোটা এলাকা সিসি ক্যামেরায় নজরদারিতে থাকে।
গত কয়েক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন করছেন। এবারও তাঁর উদ্বোধনের কথা জানিয়েছেন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত থাকেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
আটচালা প্রতিমা, ঐতিহাসিক প্রথা, সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সব মিলিয়ে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির দুর্গাপুজো আজও তমলুকের আবেগ ও গর্বের অংশ।